
নিজস্ব প্রতিবেদক
আসন সমঝোতা রাজনীতিতে নতুন কিছু নয়। বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় এটি প্রায়ই একটি বাস্তব কৌশল হিসেবে ব্যবহৃত হয়—ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা, বৃহত্তর জোট গঠন কিংবা প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে তোলার প্রয়োজনে। সুতরাং আসন সমঝোতা নিজেই কোনো অপরাধ নয়, বরং অনেক ক্ষেত্রে এটি রাজনৈতিক বাস্তবতার অংশ।
কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, এই সমঝোতার মূল্য কে দিচ্ছে?
গণঅধিকার পরিষদের ক্ষেত্রে বাস্তবতা হলো—সারাদেশে ট্রাক মার্কার পক্ষে যে ভোটগুলো আমরা দীর্ঘদিনের সাংগঠনিক পরিশ্রম, মাঠপর্যায়ের আন্দোলন ও রাজনৈতিক বিশ্বাসযোগ্যতার মাধ্যমে প্রায় নিশ্চিত বলে ধরে নিয়েছিলাম, সেই ভোটগুলো এখন অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে গেছে। এটি নিছক আবেগের বিষয় নয়, বরং একটি বাস্তব রাজনৈতিক সংকেত।
প্রথমত, সমঝোতার ফলে তৃণমূল কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। যারা ট্রাক মার্কাকে নিজেদের রাজনৈতিক পরিচয়ের অংশ হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন, তারা হঠাৎ করেই প্রশ্নের মুখে পড়েছেন—আমাদের অবস্থান এখন কোথায়? এই অনিশ্চয়তা ভোটের দিনে নীরব বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় রূপ নিতে পারে।
দ্বিতীয়ত, ভোটারদের আস্থার জায়গায় একটি সূক্ষ্ম ফাটল তৈরি হয়েছে। গণঅধিকার পরিষদ বরাবরই “স্বতন্ত্র অবস্থান” ও “আপসহীন রাজনীতি”-র কথা বলেছে। সেই জায়গা থেকে আসন সমঝোতা অনেক ভোটারের কাছে কৌশলগত সিদ্ধান্তের চেয়ে আদর্শগত বিচ্যুতি হিসেবেই বেশি দৃশ্যমান হচ্ছে।
তৃতীয়ত, প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক শক্তিগুলো এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াতে পারছে। তারা সহজেই বলতে পারছে—গণঅধিকার পরিষদ শেষ পর্যন্ত আপসের পথেই হাঁটল। বাস্তবতা যাই হোক, রাজনৈতিক প্রচারণায় এই বক্তব্য ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।
সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, ভোটের অঙ্ক শুধু সংখ্যার হিসাব নয়—এটি বিশ্বাসের হিসাব। যে ভোটগুলো আমরা “নিশ্চিত” বলে ভাবছিলাম, সেগুলো অনিশ্চিত হয়ে পড়া মানে ভবিষ্যৎ রাজনীতির জন্য একটি সতর্ক বার্তা। আসন সমঝোতা যদি করতেই হয়, তবে তা হওয়া উচিত ছিল তৃণমূলকে সম্পৃক্ত করে, কর্মীদের আস্থায় নিয়ে এবং ভোটারদের কাছে স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিয়ে।
অন্যথায়, স্বল্পমেয়াদে কৌশলগত সুবিধা পাওয়া গেলেও দীর্ঘমেয়াদে দলীয় শক্তি, ভোটব্যাংক ও রাজনৈতিক বিশ্বাসযোগ্যতা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি থেকেই যায়।
এই বাস্তবতা স্বীকার করাই এখন সময়ের দাবি। কারণ রাজনীতিতে সবচেয়ে বড় মূলধন হলো জনগণের বিশ্বাস—একবার অনিশ্চিত হয়ে গেলে, তা পুনরুদ্ধার করা সহজ নয়।
আল আমিন মিলু
রাজনৈতিক বিশ্লেষক গবেষক এবং
আহ্বায়ক গনঅধিকার পরিষদ
সরিষাবাড়ি উপজেলা শাখা জামালপুর