
মোঃ রবিউল ইসলাম মিনাল:গোদাগাড়ী প্রতিনিধি
রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলের অন্যতম প্রধান শস্যভাণ্ডার গোদাগাড়ী। যেদিকে চোখ যায়, সেদিকেই সবুজের সমারোহ। বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে দোল খাচ্ছে আলুর কচি পাতা। অনুকূল আবহাওয়া আর আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতির সঠিক প্রয়োগে এবার গোদাগাড়ীতে আলুর ‘বাম্পার ফলন’ আশা করছেন স্থানীয় কৃষকরা। গত বছরের ভালো দাম এবং বর্তমান বাজার পরিস্থিতি কৃষকদের মনে বাড়তি আশার সঞ্চার করেছে।
রেকর্ড ছাড়িয়েছে আবাদ
চলতি ২০২৪-২৫ মৌসুমে রাজশাহী জেলায় আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩৫,৮০০ হেক্টর, কিন্তু বাস্তবে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে আবাদ হয়েছে অনেক বেশি। বিশেষ করে গোদাগাড়ীর মোহনপুর, পাকড়ী, রিশিকুল, দেওপাড়া ইউনিয়ন এবং গোদাগাড়ী ও কাঁকনহাট পৌর এলাকায় আলু চাষের জোয়ার দেখা দিয়েছে। স্থানীয় কৃষি অফিসের মতে, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এখন পর্যন্ত গাছে মড়ক বা ধসা জাতীয় কোনো রোগবালাই দেখা দেয়নি।
জাতের বৈচিত্র্য ও বাজার চাহিদা
গোদাগাড়ীর আলুর চাহিদা দেশের বিভিন্ন প্রান্তের পাইকারি বাজারে ব্যাপক। এখানকার চাষীরা মূলত ডায়মন্ড, এস্টারিক্স (লাল আলু) এবং কার্ডিনাল জাতের আলু বেশি আবাদ করেন। তবে অধিক ফলনের আশায় অনেকে বার্মা, গ্রানোলা ও কুপরিসুন্দরী জাতের আলুরও চাষ করেছেন। বাজারদর স্থিতিশীল থাকলে এই আলু দেশের গণ্ডি পেরিয়ে অর্থনীতিতে বড় প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কৃষকের অংকের খাতা: খরচ ও প্রত্যাশা
মাঠে সবুজের সমারোহ থাকলেও কৃষকদের মনে রয়েছে খরচের দুশ্চিন্তা। কৃষকরা জানান:
রোপণ খরচ: প্রতি বিঘা জমিতে আলু রোপণ করতেই খরচ হচ্ছে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা।
মোট ব্যয়: বীজ, সার (এমওপি, ডিএপি, টিএসপি), কীটনাশক ও শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি পাওয়ায় উৎপাদন খরচ গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি।
সার সংকট: অনেক জায়গায় পর্যাপ্ত সার না পাওয়া এবং চড়া দামে সার কিনতে বাধ্য হওয়া চাষীদের একটি বড় অভিযোগ।
ফলন: যদি প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হয়, তবে প্রতি বিঘায় ১০০ থেকে ১২০ মণ পর্যন্ত ফলন পাওয়া সম্ভব।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের আতঙ্ক
মাঠে ব্যস্ত সময় পার করা কৃষকদের মনে এখনও ২০২১ সালের নভেম্বরের সেই স্মৃতি টাটকা। সেবার আকস্মিক বন্যা ও ভারী বৃষ্টিপাতে আলুর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। এবারও সারের দাম বৃদ্ধি এবং আকস্মিক কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা মড়ক দেখা দিলে বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়ার আশঙ্কা করছেন প্রান্তিক চাষীরা।
কৃষি বিভাগের তৎপরতা
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ ও উন্নত মানের সার-বীজ ব্যবহারে উৎসাহিত করছে। মাঠ পর্যায়ে কর্মকর্তারা কৃষকদের সাথে যোগাযোগ রাখছেন যাতে সঠিক সময়ে সেচ ও নিড়ানি কাজ শেষ করা যায়।
গোদাগাড়ীর অর্থনীতি মূলত কৃষিনির্ভর। যদি বর্তমান আবহাওয়া বজায় থাকে এবং কৃষকরা সঠিক বাজারমূল্য পায়, তবে এই আলু চাষ কেবল কৃষকের ভাগ্য নয়, পুরো উপজেলার অর্থনৈতিক চিত্রই বদলে দেবে।
মোঃ রবিউল ইসলাম মিনাল
01712483534