
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রথমত, রাজনীতি কোনো শূন্য কাঠামো নয়; রাজনীতি গড়ে ওঠে মানুষ দিয়ে। সংবিধান, আইন, প্রতিষ্ঠান—সবই কাগজে লেখা নিয়মমাত্র, যদি সেগুলো বাস্তবায়ন করার দায়িত্বে থাকা মানুষগুলো নৈতিকতা ও দায়বদ্ধতাহীন হয়। একজন অসৎ রাজনীতিবিদ ভালো ব্যবস্থাকেও বিকৃত করতে পারে, কিন্তু একজন সৎ রাজনীতিবিদ দুর্বল ব্যবস্থার মাঝেও কিছুটা হলেও ন্যায় প্রতিষ্ঠা করতে পারেন।
দ্বিতীয়ত, রাজনীতিবিদই রাষ্ট্রক্ষমতার মুখ। জনগণ রাষ্ট্রকে দেখে তার আচরণে, ভাষায়, সিদ্ধান্তে। যখন রাজনীতিবিদ দুর্নীতি, প্রতিহিংসা, মিথ্যাচার ও ক্ষমতার দম্ভে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে, তখন রাজনীতির প্রতি মানুষের ঘৃণা জন্মায়। এর ফলেই রাজনীতি দখল করে নেয় অর্থবিত্ত, পেশিশক্তি ও অপরাধচক্র। ভালো মানুষ তখন রাজনীতি থেকে দূরে সরে যায়, আর খারাপ রাজনীতি আরও পাকাপোক্ত হয়—এ এক ভয়াবহ চক্র।
তৃতীয়ত, ভালো রাজনীতিবিদ বলতে কেবল শিক্ষিত বা বাগ্মী মানুষ বোঝায় না। ভালো রাজনীতিবিদ সেই ব্যক্তি, যিনি ক্ষমতাকে সেবা মনে করেন, প্রতিপক্ষকে শত্রু নয়—ভিন্নমত হিসেবে দেখেন, এবং রাষ্ট্রকে দল বা ব্যক্তির ঊর্ধ্বে রাখেন। নৈতিকতা, সহনশীলতা, জবাবদিহি ও আত্মসংযম—এই গুণগুলো ছাড়া রাজনীতি কখনো কল্যাণমুখী হতে পারে না।
চতুর্থত, সমাজ নিজেই ভালো রাজনীতিবিদ তৈরির কারখানা। যখন ভোটাররা আদর্শের চেয়ে সুবিধা, ন্যায়বিচারের চেয়ে দলীয় আনুগত্যকে বড় করে দেখে, তখন ভালো রাজনীতিবিদের জায়গা সংকুচিত হয়। ফলে ভালো রাজনীতি চাইলে শুধু রাজনীতিবিদকে দোষ দিলেই হবে না; নাগরিকদের রাজনৈতিক সচেতনতা ও নৈতিক প্রত্যাশাও পরিবর্তন করতে হবে।
সবশেষে বলা যায়, ভালো রাজনীতি কোনো অলৌকিক ঘটনা নয়, এটি একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ার কেন্দ্রবিন্দুতে আছেন ভালো রাজনীতিবিদ—যারা সাহস করে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ান, ক্ষমতার অপব্যবহারকে না বলেন এবং জনপ্রিয়তার চেয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বার্থকে গুরুত্ব দেন। ভালো মানুষ রাজনীতিতে না এলে রাজনীতি কখনো ভালো হবে না—এটাই নির্মম বাস্তবতা।
আল আমিন মিলু
আহ্বায়ক গনঅধিকার পরিষদ
সরিষাবাড়ি উপজেলা শাখা জামালপুর