
নিজস্ব প্রতিবেদক
হাদী ও নুর—দুজনেই ভিন্ন সময়ে, ভিন্ন পরিসরে—একটি বিষয়ে আপসহীন ছিলেন:
দেশের সার্বভৌমত্ব, ন্যায্যতা এবং ভারতের আধিপত্যবাদী রাজনীতির বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান।
আর ঠিক সেই জায়গাতেই কি তাদের অপরাধ?
হাদীর ওপর হামলা, নুরের ওপর বারবার আক্রমণ—এসবকে আলাদা করে দেখার সুযোগ কি আদৌ আছে? নাকি এগুলো একই রাজনৈতিক বাস্তবতার ভিন্ন ভিন্ন অধ্যায়? প্রতিবারই আমরা শুনি, “এটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা”, “ব্যক্তিগত শত্রুতা”, “অভ্যন্তরীণ কোন্দল”। কিন্তু প্রশ্ন হলো—কেন বিচ্ছিন্ন ঘটনাগুলো বারবার একই ধরনের মানুষদের সঙ্গেই ঘটে?
হাদী কথা বলতেন সীমান্ত হত্যা নিয়ে, অসম চুক্তি নিয়ে, আঞ্চলিক আধিপত্য নিয়ে। নুর প্রশ্ন তুলেছেন ক্ষমতার নৈতিকতা নিয়ে, বিদেশি প্রভাব নিয়ে, রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তে জনগণের অনুপস্থিতি নিয়ে। তারা কেউই সশস্ত্র ছিলেন না, রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রে জড়িত ছিলেন না—তারা শুধু প্রশ্ন করেছিলেন।
আর এই উপমহাদেশে প্রশ্ন করাই কি সবচেয়ে বড় অপরাধ?
হাদীর ওপর হামলার পর আমরা দেখেছি—শোক, ক্ষোভ, প্রতিবাদ। কিন্তু তদন্ত কোথায় গিয়ে থেমেছে, সেটাও আমরা জানি। নুরের ওপর আক্রমণের পরও একই চিত্র—নিন্দা আছে, আশ্বাস আছে, কিন্তু দৃশ্যমান বিচার নেই। এই বিচারহীনতাই কি পরবর্তী হামলাকারীদের সাহস জোগাচ্ছে না?
এখানে একটি অস্বস্তিকর প্রশ্ন উঠে আসে—
ভারতের বিরুদ্ধে কথা বললে কি এই দেশেও অদৃশ্য এক লাল দাগ টানা হয়?
যে দাগ পেরোলেই শুরু হয় হুমকি, হামলা, চরিত্রহনন—আর কখনো কখনো মৃত্যু?
এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে অনেকেই চুপ করে যান। কারণ চুপ থাকাই আজ নিরাপদ। কিন্তু চুপ থাকার এই সংস্কৃতিই তো হাদী ও নুরদের একা করে দেয়। আজ তাদের ওপর হামলা হয়, কাল অন্য কারো ওপর—আর আমরা তখনও বলি, “সময় খারাপ”।
কিন্তু সময় খারাপ হয় না—
খারাপ হয় রাজনৈতিক নীরবতা।
যে রাষ্ট্রে ভিন্নমত মানেই শত্রু,
যে অঞ্চলে প্রশ্ন মানেই ঝুঁকি,
সেখানে গণতন্ত্র শুধু কাগজে থাকে, বাস্তবে নয়।
হাদী ও নুরের ওপর আক্রমণ আমাদের একটাই বার্তা দেয়—
এই দেশে ভারতের বিরুদ্ধে কথা বলা মানে কেবল রাজনৈতিক অবস্থান নয়,
এটা এক ধরনের জীবনের ঝুঁকি।
আর যদি আমরা আজও এই প্রশ্ন না তুলি,
তাহলে কাল ইতিহাস আমাদের জিজ্ঞেস করবে—
হাদী ও নুরের সময় তোমরা কোথায় ছিলে?
আল আমিন মিলু
রাজনৈতিক বিশ্লেষক গবেষক ও
আহ্বায়ক গনঅধিকার পরিষদ
সরিষাবাড়ি উপজেলা শাখা জামালপুর