
প্রদীপ চন্দ্র মম
যখন নিঃশব্দে নিজের দিকে ফিরি,
অন্তর জিজ্ঞেস করে—
আমি কি কেবল রক্ত-মাংসের ক্ষণস্থায়ী আশ্রয়,
নাকি দেহের অন্ধকার ভেদ করে
কোনো অনন্ত আলো বহন করি?
বিবেক ডাকে নীরব স্বরে—
“এ পথ সত্যের, এসো।”
মন দুলে ওঠে আবেগের ঢেউয়ে,
আর রিপুরা ফিসফিস করে—
“এই সুখ নাও, এই লাভ নাও—
এই আরামেই নাকি মুক্তি।”
আমি থমকে যাই—
কার দাস আমি?
সত্যের, নাকি প্রলোভনের?
প্রতিটি সিদ্ধান্তের মোড়ে
বিবেক জ্বালে ক্ষুদ্র প্রদীপ,
কিন্তু রিপুর ঝড়
সে আলো ঢেকে দিতে চায় বারবার।
মন তখন ঘূর্ণির মতো ঘোরে—
দেখে, তবু কিছুই বোঝে না
কোন টান তাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে।
এই দাসত্বই রচনা করে
ফিরে ফিরে আসার ক্লান্তপথ;
জন্ম আর মৃত্যুর অনন্ত আবর্তে
আত্মা হয়ে ওঠে পথহারা নদী।
তবু কোথাও এক অন্তর্লীন ডাক—
গুরু-কৃপা, সাধনার স্পর্শ,
শুচি কর্মের ধীর ছায়ায়
মন আস্তে আস্তে শান্ত হয়।
রিপুর শৃঙ্খল ঢিলে হয়,
আর “আমি”-র দেয়াল
ভেঙে পড়তে থাকে।
একদিন আর প্রশ্ন থাকে না—
আমি কে?
শুধু থাকে আলো,
শুধু থাকে প্রশান্তি,
শুধু থাকে সত্যের নিঃশ্বাস।
বাসনা নিভে গেলে,
আকাঙ্ক্ষা স্তব্ধ হলে,
আত্মা ফিরে যায় তার উৎসে—
পরমাত্মার নীরব বুকে।
সেই মিলনেই
সব প্রশ্নের অবসান,
সব ক্লান্তির মুক্তি,
আর অন্তরের চিরন্তন সান্ত্বনা।
১৭/১২/২০২৫ খ্রিঃ।