
নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশে এমন কোনো দপ্তর আছে কিনা যেখানে দূর্নীতির ছায়া নেই—এ নিয়ে মানুষের সন্দেহ নতুন কিছু নয়। প্রতিদিনের অভিজ্ঞতা, ছোট-বড় কাজের চক্র, ক্ষমতার অপব্যবহার আর জবাবদিহিতার অভাব আমাদেরকে এমন এক জায়গায় দাঁড় করিয়েছে, যেখানে দূর্নীতিকে অনেকেই যেন ‘স্বাভাবিক নিয়ম’ বলেই মেনে নেয়। অথচ বাস্তবতা হলো—দূর্নীতি কখনোই স্বাভাবিক নয়; এটি রাষ্ট্রের শ্বাসরোধ করার মতো এক ভয়ংকর ভাইরাস।
দূর্নীতি মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন অবশ্যই কঠিন। কারণ দূর্নীতি কেবল ব্যক্তিগত অসৎ মানসিকতার ফল নয়—এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি কাঠামোগত সমস্যা। আমলাতন্ত্রের অস্বচ্ছতা, রাজনৈতিক সদিচ্ছার ঘাটতি, নিয়োগ ও পদোন্নতিতে দলীয়করণ, আর দুর্বল বিচারব্যবস্থা—সব মিলেই এই রোগকে গভীরভাবে শিকড় গাঁথতে সুযোগ করে দিয়েছে।
কিন্তু কঠিন বলে যে অসম্ভব, তা নয়। বরং ইতিহাস বলছে—কোনো জাতিই দূর্নীতি থেকে মুক্ত হয়নি একদিনে; প্রয়োজন হয়েছে নেতৃত্বের দৃঢ়তা, আইনের কঠোর প্রয়োগ, এবং মানুষের মানসিকতার পরিবর্তন।
আমাদের দেশে দূর্নীতি দমন শুধুই আইন-শৃঙ্খলার বিষয় নয়; এটি রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও সামাজিক মূল্যবোধের পুনর্গঠনের ব্যাপার। যখন একটি সমাজে সৎ থাকা চ্যালেঞ্জ এবং অসৎ হওয়া সুবিধা হয়ে দাঁড়ায়, তখন সেখানে পরিবর্তন আনা আরও কঠিন হয়ে পড়ে। কিন্তু এই অবস্থাই আমাদেরকে বেশি করে উপলব্ধি করায়—পরিবর্তনটা জরুরি, এবং জরুরি এখনই।
দূর্নীতি মুক্ত বাংলাদেশ গড়তে তিনটি স্তরকে বদলাতে হবে—
১. রাজনৈতিক নেতৃত্বের দায়বদ্ধতা
নেতৃত্ব যদি নিজেকে আইনের ঊর্ধ্বে মনে করে, তাহলে সাধারণ মানুষ কেন আইন মানবে? দূর্নীতি দমনে উদাহরণ তৈরি করাটাই সবচেয়ে বড় শক্তি।
২. প্রশাসনিক স্বচ্ছতা
দপ্তরগুলোতে ডিজিটাল প্রক্রিয়া, জবাবদিহিতা ও মনিটরিং—দূর্নীতি কমানোর সবচেয়ে কার্যকর উপায়। মানুষ যেন ‘কি করলে, কার কাছে গেলে, কত সময় লাগবে’—এসব স্পষ্টভাবে জানতে পারে।
৩. সামাজিক মানসিকতার পরিবর্তন
দূর্নীতি শুধু টেবিলের ওপারের লোক করে না—অনেক সময় টেবিলের এপারের মানুষের তাড়াহুড়ো, শর্টকাট চাওয়া, অবৈধ সুবিধা পাওয়ার লোভও এই রোগকে বাড়ায়।
সবকিছু মিলিয়ে সত্যি—স্বপ্নটা কঠিন, অনেক কঠিন। কিন্তু এই কঠিন স্বপ্নই একদিন বাস্তবে রূপ নেবে যদি জনগণ নিজের অধিকার নিয়ে সচেতন হয়, যদি নেতৃত্ব নিজের অবস্থান পরিষ্কার করে, আর যদি আমরা সবাই মিলে ঘোষণা দিই—“এই দেশে আর কেউ দূর্নীতির বিনিময়ে সম্মান কিনতে পারবে না।”
দূর্নীতি মুক্ত বাংলাদেশ—এটি শুধু একটি রাজনৈতিক স্লোগান নয়, এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রতি আমাদের অঙ্গীকার। এখন সময় এসেছে সেই অঙ্গীকারকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার।
আল আমিন মিলু
লেখক গবেষক রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং
আহ্বায়ক
গনঅধিকার পরিষদ
সরিষাবাড়ি উপজেলা শাখা জামালপুর