
প্রদীপ চন্দ্র মম
তোমাকে নিয়ে জমে আছে যত কথা—
সবই যেন শুকনো পাতার মতো
হেমন্তের বাতাসে উড়ে যায়,
আবার ফিরে আসে
মন-ভেজানো কোনো সন্ধ্যার জোয়ারে।
তুমি একদিন ডাকলে—
দিনশেষের পথিকের মতো আমি
সেই ডাকে হেঁটে গেলাম;
দেখলাম, নীরবতারও আছে
কত দীর্ঘ ছায়া।
রাতের শূন্যতায় তুমি ছিলে
একফালি চাঁদের ঘুম-তোলা আলো—
ভেবেছি বহুবার,
এই আলো কি রাখবে আমাকে বাঁচিয়ে,
নাকি অচেনা কোনো অন্ধকারে
ফেলে দেবে নির্জনে?
তোমার হাত ধরতে চেয়েছিলাম—
যেমন কেউ নিভে যাওয়া পাতার ওপর
নরম আঙুল রেখে বলে,
“ফিরে এসো, তোমার ছায়া এখনো
এই বাতাসে বেঁচে আছে।”
তোমার চলে যাওয়ার কথাগুলো
আজও কুয়াশার মতো গায়ে লাগে—
তুমি বলেছিলে,
স্মৃতি একদিন রেখে যাবে আমার হাতে;
আর আমি পারতাম কি
তার উষ্ণতা দীর্ঘকাল ধরে রাখতে?
সময়ের শীতে তো আমরা দু’জনেই
হারিয়েছি কত উজ্জ্বল শব্দ।
আজ সন্ধ্যায় ধানক্ষেতের ধারে
হঠাৎ মনে হলো—
তুমি যদি ফিরে এসে দাঁড়াতে
পাতাঝরা পথের মোড়ে,
আমি কি বলতে পারতাম সব কথা?
নাকি ডুবে যেতাম সেই পুরোনো নদীতে—
যেখানে আমাদের ছায়ারা
কখনো ঠিকমতো মিলতে পারেনি।
তুমি যে চিঠির কথা বলেছিলে—
যে চিঠিতে লুকিয়ে ছিল
তোমার নীরবতার ঘ্রাণ—
আজও খুঁজি তার অক্ষরের ক্ষীণ স্পন্দন।
হয়তো লিখেছিলে,
হয়তো লেখোনি—
কিন্তু আমার ভেতর কোনো কাগজই
তোমার নাম শেষ করে না কোনোদিন।
আমাদের ভুল— মানতেই হয়—
আলো যত কাছে ডাকি,
ছায়া তত দীর্ঘ হয়ে যায়;
আর সেই ছায়ার গাঢ় অন্ধকারে
মানুষ কখনো কখনো
নিজেকেও চিনতে পারে না।
তবু এই হেমন্তের নিশি ঘনালে
পাতার মর্মরে শুনি তোমার কণ্ঠ—
কোনো হারিয়ে যাওয়া পথের শেষে
তুমি বলো, “ভালো থেকো।”
আর আমি জীবনানন্দের মতো
একলা পথ কাটাই—
শস্যের গন্ধ, নদীর কুয়াশা,
নভেম্বরের চাঁদ পেরিয়ে—
তোমাকে ভুলতে নয়,
তোমাকে বহন করে
নিজেকে বাঁচাতে বাঁচাতে।
২০/১১/২০২৫ খ্রিঃ।