
প্রদীপ চন্দ্র মম
আমরা কি এমন মানবতার স্বপ্ন দেখেছিলাম—
যেখানে শিশুর হাসি ডুবে যায় অপহরণ আর হত্যার অন্ধকার ছায়ায়,
যেখানে গণতন্ত্রের নামে লোহার খাঁচায় বন্দি হয় স্বাধীনতা,
আর রাস্তাঘাট ভরে ওঠে ক্ষত-বিক্ষত মুক্তির নীরব আর্তনাদে?
রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে চলছে অবিরাম যুদ্ধের উন্মাদ খেলা,
পারমাণবিক আগুনের ভয় দেখিয়ে দগ্ধ করা হয় আকাশ,
শান্তি নির্বাসিত হয় কোন অচেনা দ্বীপে—
আর মানবতার শপথগুলো প্রতিদিন ভেঙে পড়ে
বিধ্বস্ত নীরবতার তটে।
নিত্যদিনের ভাত-রুটির দাম ছুঁয়েছে মেঘের মাথা,
মায়ের খালি হাঁড়ি কেঁদে ওঠে ক্ষুধার্ত শিশুর মতো,
পবিত্র জল আজ মরীচিকার ছায়া—
মানুষ তৃষ্ণার পিছু দৌড়ায়,
জীবনের কলস প্রতিদিন একটু একটু করে শুকিয়ে যায়।
উত্তর–দক্ষিণের হিমগিরি গলছে আহত অভিমানে,
ডুবে যাচ্ছে গ্রাম, ঘাট, বন্দর আর শহর—
কখনো ভূমিধস, কখনো তীব্র খরা,
কখনো আবার বন্যার রুদ্র থাবা—
প্রকৃতি তখন হাহাকার করে ওঠে:
“এ কোনো প্রতিশোধ নয়—
এ শুধু তোমাদের পাপের প্রতিধ্বনি।”
বাতাসে পাক খাচ্ছে বিষের শ্বাস,
পাখিরা ভুলে যাচ্ছে তাদের নিবাস,
ফুলেরা হারাচ্ছে মাতাল করা গন্ধ,
অরণ্য আজ মৃত্যুপথযাত্রী—
আর প্রতিদিন মানুষের লোভের আগুনে
পৃথিবীর কোমল দেহ ঝলসে যায়—
নীরব ক্ষোভে কাঁপে ভূগোল।
ক্লান্ত প্রকৃতি আজ হতাশ,
তার চোখে আর নেই সেই স্নেহভরা নীল আলো—
রয়েছে শুধু স্তর-স্তর দুঃখ,
স্মৃতির ক্ষতচিহ্ন, আর ভাঙা হৃদয়ের রক্তিম আর্তি,
যা নিঃশব্দে বলে ওঠে—
“আমি ছিলাম তোমাদের মা—
অগণিত ঋতু ধরে আগলে রেখেছি আপন করে।
তোমরা কেন নদী করেছ বিষাক্ত,
কেন লোভের জ্বরে জ্বালিয়ে দিলে আমার বন,
কেন বাতাসে মিশিয়েছ ধোঁয়া—
এ কি সেই মোহ, যার নেশায় মাটিতেও ঢেলেছ বিষ?
কেন শ্বাসরুদ্ধ করলে আমার সবুজ প্রাণ?”
আজ পৃথিবী থমকে দাঁড়িয়ে—
মানুষের উন্মত্ততায় হারিয়ে যাচ্ছে বাঁচার স্বপ্ন,
আর নিঃশেষিত প্রকৃতির কণ্ঠে
ধ্বনিত হয় শেষ প্রতীক্ষার আর্তনাদ—
“থামো, হে মানুষ—
আর একবার আমায় বাঁচতে দাও তোমাদের জন্যই।
আমি এখনো বাঁচতে চাই—
তোমাদের ভবিষ্যতের জন্যই।
তোমরা কি তবে আমাকে বাঁচতে দেবে?”
১৬/১১/২০২৫ খ্রিঃ