
প্রদীপ চন্দ্র মম
বুকে একদিন আলো পড়েছিল—
যেন কোনো পুরোনো নদী ফিরে আসে মাটির ভেতর দিয়ে।
কল্বে তখন এক নাম ধ্বনিত হলো নিঃশব্দে—
“আল্লাহ…”
মালাকুতের হাওয়ায় দুলল এক অদেখা গাছের পাতা,
আমি বুঝলাম— আদম এখনো মাটির গন্ধে জেগে আছেন।
ডান স্তনের নিচে তখন আগুনের মতো ঠান্ডা এক আলো—
ইব্রাহিমের আকাশের মতো উঁচু কুদরত সেখানে ঝুলে থাকে।
জাবারুতের সেই দিগন্তে আমি দেখি—
নূহের নৌকা ভেসে চলে আমার শিরায়,
আর আমি তার যাত্রী হয়ে ডুবে যাই ধৈর্যের জলে।
বাম দিকের অন্তরতলে মূসার কণ্ঠ—
শুনতে পাই যেন বজ্রপাত নয়, প্রার্থনা।
খিজিরের চোখে নিঃশব্দ নদী বয়ে চলে;
সির লতিফা খুলে গেলে আমার দোয়া আর আমার নয়—
সে পৌঁছে যায় কোনো দূরতম আকাশে,
যেখানে শুধু “হও” উচ্চারণে পৃথিবী কেঁপে ওঠে।
ডান দিকের বাতাসে ঈসার নিঃশ্বাস—
গাছেরা হঠাৎ সবুজ হয়ে ওঠে।
মৃত ভাবনার চোখে আলো জ্বলে,
লাহুতের রহস্যে আমি দেখি—
মৃত্যুরও এক ধরণের জন্ম আছে।
বুকের মাঝখানে তখন নূর-ই-মুহাম্মদী—
জান্নাতুল ফেরদাউসের মতো শান্ত,
তবু গভীর নীল সাগরের মতো বিস্তৃত।
আমি তাঁর প্রেমে হারিয়ে যাই, নিজেকে খুঁজে পাই না—
শুধু জোছনায় দেখি, আমি ভেসে আছি তাঁর রহমতের ঢেউয়ে।
কপালে উঠে আসে এক অনন্ত আকাশ—
আরশের নীচে কোনো নাম নেই তখন,
শুধু আলো, শুধু দিদার।
আন্না লতিফা খুলে গেলে আমি আর আমি থাকি না—
আমি তখন সেই নূরের অংশ, যার শুরু নেই, শেষও নেই।
নফস তখন থেমে যায়—
আগে সে ছিল কুকুর, ঘোড়া, ছাগল;
এখন সে মানুষ—
নরম চোখে তাকিয়ে বলে—
“ফিরে এসো, প্রশান্ত আত্মা, তোমার রব প্রতীক্ষায়।”
তারপর সবকিছু শান্ত হয়—
আকাশের রঙ মাটিতে গলে যায়,
আমার ভেতরের সাত দরজা নিঃশব্দে খুলে যায়—
আর আমি শুনি— জীবনের মতো গভীর এক ধ্বনি,
যা বলে—
ইলাহী প্রেমই চিরন্তন— বাকি সব, সন্ধ্যার ছায়া।
২৮/১০/২০২৫ খ্রিঃ।