
নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজনীতি এক সময় ছিল মানুষের অনুপ্রেরণার জায়গা। যারা রাজনীতি করতেন, তারা ছিলেন সমাজের আদর্শ, নীতি-নৈতিকতা ও শিষ্টাচারের প্রতীক। কিন্তু আজকের বাস্তবতায় সেই রাজনীতির চিত্র সম্পূর্ণ উল্টো। এখন রাজনীতি মানেই অনেকের কাছে ক্ষমতার প্রতিযোগিতা, অপমান-অভিযোগ, আর দলীয় কোন্দল। এই চিত্র শুধু জনগণকেই নয়, বিশেষ করে নতুন প্রজন্মকে ভয়ংকরভাবে হতাশ করছে।
বর্তমান প্রজন্মের চোখে রাজনীতিতে শিষ্টাচারহীন আচরণ মানে হচ্ছে—একটি ব্যর্থ নেতৃত্ব, একটি নষ্ট মূল্যবোধের সংস্কৃতি। তারা দেখে, দলের ভেতরে সিনিয়র-জুনিয়ররা পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা হারিয়ে ফেলেছে। মতবিরোধ মানেই এখন শত্রুতা। ভিন্ন মত প্রকাশ করলেই হয় শাস্তি, নয়তো দল থেকে বহিষ্কার। অন্যদিকে, দলের বাইরে প্রতিদ্বন্দ্বী দলের প্রতি শালীনতা বজায় রাখার জায়গায় এসেছে অপমানজনক ভাষা, বিদ্বেষ আর ঘৃণা।
ফেসবুক-টকশো কিংবা সভা-সমাবেশ—যেখানেই যান না কেন, রাজনীতিবিদদের মধ্যে পারস্পরিক সম্মান হারিয়ে যাচ্ছে। নতুন প্রজন্ম যখন এটা দেখে, তখন তাদের মনে প্রশ্ন জাগে—এই রাজনীতি কি আদৌ দেশ ও সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার, নাকি কেবল ব্যক্তিগত স্বার্থের মঞ্চ?
অনেক তরুণ আজ রাজনীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে, কারণ তারা রাজনীতিকে আর নৈতিকতা ও আদর্শের জায়গা হিসেবে দেখছে না। অথচ, রাজনীতি হওয়া উচিত ছিল জ্ঞান, যুক্তি ও শালীনতার জায়গা। মতের ভিন্নতা থাকা সত্ত্বেও একজন রাজনীতিক আরেকজনকে সম্মান করবেন—এই সংস্কৃতি হারিয়ে যাচ্ছে দ্রুত।
রাজনীতিতে শিষ্টাচার মানে শুধু ভদ্র ভাষা নয়, এর মানে হলো সহনশীলতা, যুক্তির প্রতি শ্রদ্ধা, এবং দেশের প্রতি দায়িত্ববোধ। দলীয় সভায় একে অপরের কথা শোনা, বিরোধীদের সমালোচনার জবাবে গালাগাল নয় বরং তথ্য-ভিত্তিক প্রতিউত্তর দেওয়া—এই শিষ্টাচারই রাজনীতিকে মহৎ করে তোলে।
বর্তমান প্রজন্ম ডিজিটাল যুগের সন্তান। তারা প্রতিদিন রাজনীতিবিদদের বক্তব্য, আচরণ ও ভাষা অনলাইনে দেখে। তারা বিশ্লেষণ করে, প্রশ্ন তোলে, সমালোচনা করে। তারা আর অন্ধভাবে অনুসরণ করে না। তাই রাজনীতির ভাষা ও আচরণে যে অশালীনতা ঢুকে গেছে, তা তাদের চোখে শুধু অগ্রহণযোগ্য নয়, বরং ঘৃণিত।
রাজনীতিকে আবার মর্যাদার জায়গায় ফেরাতে হলে প্রথমে দরকার শিষ্টাচার পুনরুদ্ধার। দলের ভেতরে সিনিয়র-জুনিয়র সম্পর্ক হোক পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও বোঝাপড়ার ওপর ভিত্তি করে। বিরোধী দলকে দেখুক প্রতিপক্ষ হিসেবে, শত্রু নয়। আর তরুণদের রাজনীতিতে আগ্রহী করতে হলে, তাদের সামনে রাখতে হবে এমন এক রাজনীতি—যেখানে থাকবে নীতি, মানবিকতা, আর ভাষা ও আচরণে শালীনতা।
যেদিন রাজনীতির ভাষা ও আচরণে সৌন্দর্য ফিরবে, সেদিনই নতুন প্রজন্ম আবার বিশ্বাস করবে—রাজনীতি মানেই সেবা, রাজনীতি মানেই দায়িত্ব, রাজনীতি মানেই জাতির নেতৃত্বের মহৎ পথ।
-আল আমিন মিলু
আহ্বায়ক
গনঅধিকার পরিষদ
সরিষাবাড়ি উপজেলা শাখা
জামালপুর