প্রদীপ চন্দ্র মম
কার্তিক নামে ঝরে পড়া পাতার মতো দিন—
ধানের গন্ধে ভরে যায় সন্ধ্যার হাওয়া।
দূরের উঠোনে প্রদীপ জ্বলে নিঃশব্দে—
যেন মৃত স্মৃতির চোখে ফিরে আসে আলো।
শীতের আভাসে শিশির পড়ে নরম মাঠে,
ধান কাটার গানে দোলে সোনালি ক্লান্তি;
পথে শালিকেরা ঘুমিয়ে আছে নিঃশব্দে—
নদীর বুকে চাঁদ গলে পড়ে রুপোলি দুধের মতো।
পুকুরপাড়ে ছেলেরা ফোটায় টিপটিপ ফটকা,
বাতাসে ভাসে সরিষা-ফুলের হলুদ ঘ্রাণ;
আর মাটির প্রদীপে বউরা আঁকে নীরব প্রার্থনা—
“এই আলো যেন ঘরে ঘরে থাকে,
চালের হাঁড়ি ভরে উঠুক, প্রাণে আসুক শান্তি।”
লক্ষ্মীর পায়ের আলপনায় তখন
জেগে ওঠে স্বপ্ন, বুকে নিঃশব্দ আশ্বাস—
দীপাবলি মানে শুধু আলো নয়,
এ এক প্রতিশ্রুতি— অন্ধকার পেরোনোর সাহস।
গ্রামের আকাশে ধোঁয়ার পর্দা,
ধান পোড়ার গন্ধে মিশে যায় আলোর উৎসব;
একটা শুকনো পাতা ভেসে এসে পড়ে বারান্দায়—
মনে হয়—এই দীপাবলি জীবনেরই রূপক,
একটু জ্বলে, একটু নিভে—
তারপর কেবল আশা, আর নিরবতার দীর্ঘ পথ।
কার্তিকের শেষ এই আলোয়
আমি শুনি মাটির কণ্ঠস্বর—
যে বলে,
“জীবন ফুরোয় না, শুধু বদলায়;
আলো যেমন ফিরে আসে প্রতিটি কার্তিকে,
তেমনি মানুষও প্রতিবারই
নতুন হয়ে জ্বলে ওঠে।”
২০/১০/২০২৫ খ্রিঃ।