1. live@dainikjamalpursangbad24.com : দৈনিক জামালপুর সংবাদ 𝟐𝟒 : দৈনিক জামালপুর সংবাদ 𝟐𝟒
  2. info@www.dainikjamalpursangbad24.com : দৈনিক জামালপুর সংবাদ 𝟐𝟒 :
বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ১০:০৯ পূর্বাহ্ন

রাজনীতি মানে রাজার নীতি নয়, রাজনীতি নীতির রাজা

প্রতিনিধির নাম :
  • প্রকাশিত: শনিবার, ৪ অক্টোবর, ২০২৫
  • ৭ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক 

বাংলাদেশের আজকের বাস্তবতায় “রাজনীতি” শব্দটা যেন একপ্রকার আতঙ্ক কিংবা কৌতুকের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেউ রাজনীতি করলে সমাজে সন্দেহের চোখে দেখা হয়, আবার কেউ রাজনীতি না করলেও রাজনীতির ছায়া থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে পারে না। অথচ রাজনীতি মানে কেবল ক্ষমতা অর্জনের লড়াই নয়—রাজনীতি মানে নীতি, আদর্শ, ন্যায়, এবং মানবকল্যাণের পথে রাষ্ট্র পরিচালনা। তাই ঠিকই বলা যায়, রাজনীতি মানে রাজার নীতি নয়; রাজনীতি নীতির রাজা।

একসময় রাজনীতি ছিল সমাজসেবার সর্বোচ্চ ক্ষেত্র। রাজনীতি মানে ছিল মানুষের কল্যাণের পথ, জাতির মুক্তির সংগ্রাম, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মাওলানা ভাসানী কিংবা ভিপি নূরের মতো নেতারা রাজনীতিকে দেখেছেন মানুষের মুক্তি ও ন্যায়ের হাতিয়ার হিসেবে। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে রাজনীতির সেই পবিত্র মঞ্চ আজ ক্ষমতার কৌশল আর ব্যক্তিস্বার্থের আখড়ায় পরিণত হয়েছে।

নীতিহীন রাজনীতি: জাতির পতনের শুরু

যে রাজনীতি নীতির ভিত্তির উপর দাঁড়ায় না, সেখানে সৎ মানুষ টিকতে পারে না। নীতি হারানো রাজনীতি মানে হচ্ছে—চাটুকারিতা, লুটপাট, দমননীতি ও দুর্নীতির রাজত্ব। আজকের রাজনীতির চিত্রে আমরা তা স্পষ্ট দেখতে পাই। রাজনীতি এখন অনেকের কাছে পেশা নয়, বরং বিনিয়োগের ক্ষেত্র। কেউ রাজনীতিতে আসে ব্যবসা রক্ষার জন্য, কেউ আসে ক্ষমতার আশ্রয় পাওয়ার জন্য। অথচ প্রকৃত রাজনীতি হওয়া উচিত জনগণের ভাগ্য বদলের সংগ্রাম, যেখানে একজন নেতা নিজেকে জনগণের সেবক মনে করবেন, প্রভু নয়।

নীতিহীন রাজনীতি সমাজে জন্ম দেয় দ্বন্দ্ব, বিভাজন ও ঘৃণার। প্রতিপক্ষকে শত্রু মনে করা, ভিন্নমতকে দেশদ্রোহী বলা—এসব হলো নীতিহীন রাজনীতির রোগ। যখন রাজনীতি থেকে নীতি হারিয়ে যায়, তখন প্রশাসন হয়ে যায় পক্ষপাতদুষ্ট, বিচার হয় অন্যায্য, আর জনগণ হয়ে পড়ে অসহায়।

নীতির রাজনীতি: যে রাজনীতি মানুষকে জাগায়

নীতির রাজনীতি মানে হচ্ছে—ন্যায়, মানবতা, দেশপ্রেম ও আত্মত্যাগের রাজনীতি। যে রাজনীতি জনকল্যাণে উৎসর্গিত। নীতির রাজনীতি বলে, ক্ষমতা নয়, দায়িত্বই রাজনীতির মূল লক্ষ্য।
একজন প্রকৃত রাজনীতিবিদ হলেন সেই ব্যক্তি, যিনি জনগণের সুখে হাসেন, দুঃখে কাঁদেন, এবং নিজের ব্যক্তিগত স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে জনস্বার্থে কাজ করেন।

বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন রাজনীতিবিদের অভাব ছিল না। স্বাধীনতার আগে যত আন্দোলন হয়েছে—তা নীতির ভিত্তিতে। ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ—সবই ছিল ন্যায়ের সংগ্রাম, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই। সেই নীতি ও ত্যাগের ফলেই আমরা পেয়েছি স্বাধীনতা।

কিন্তু স্বাধীনতার পরে সেই নীতি ধীরে ধীরে হারিয়ে গেছে দলীয় স্বার্থ, ক্ষমতার দখল ও অর্থলোভের রাজনীতিতে। এখন সময় এসেছে সেই নীতির রাজনীতি ফিরিয়ে আনার।

নীতির রাজা হিসেবে রাজনীতির পুনর্জাগরণ

রাজনীতি যদি সত্যিকার অর্থে নীতির রাজা হতে চায়, তবে প্রথমে নেতৃত্বের চরিত্রে পরিবর্তন আনতে হবে।
১. শিক্ষিত ও নৈতিক নেতৃত্ব: রাজনীতি করতে হবে জ্ঞান ও নৈতিকতার মিশ্রণে। শিক্ষিত নেতৃত্ব সমাজকে আলোকিত করে, আর নৈতিক নেতৃত্ব সমাজে আস্থা ফিরিয়ে আনে।
২. অর্থ ও প্রভাবমুক্ত রাজনীতি: অর্থের জোরে মনোনয়ন, ভোট কেনাবেচা, বা প্রশাসনিক সুবিধা—এসব বন্ধ করতে হবে।
৩. জবাবদিহিমূলক রাজনীতি: যে রাজনীতি জনগণের কাছে দায়বদ্ধ নয়, তা দ্রুতই দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়। প্রতিটি দলকে অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র চর্চা করতে হবে, নেতৃত্ব বংশানুক্রমিক নয় বরং যোগ্যতার ভিত্তিতে নির্বাচন হতে হবে।
৪. মানবিক মূল্যবোধ: রাজনীতি মানে শুধুই ক্ষমতা নয়, এটি মানবতার সেবা। অন্যের কষ্টকে নিজের কষ্ট মনে করতে না পারলে রাজনীতি পূর্ণ হয় না।

তরুণদের ভূমিকা: নীতির রাজনীতি পুনঃস্থাপন

আজকের তরুণরাই আগামী দিনের রাষ্ট্রনেতা। কিন্তু দুঃখজনকভাবে অনেক তরুণ রাজনীতিকে ঘৃণা করতে শিখেছে, কারণ তারা রাজনীতিকে দেখে শুধু দুর্নীতি, দখল, টেন্ডারবাজি আর হিংসার ক্ষেত্র হিসেবে।
এই ধারণা ভাঙতে হবে। তরুণদের বুঝতে হবে—যদি সৎ, দেশপ্রেমিক, নীতিবান মানুষ রাজনীতি না করে, তাহলে রাজনীতি দখল করবে অসৎ লোকেরা।
তরুণদের রাজনীতিতে আসতে হবে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে—স্বচ্ছতা, সেবা, ন্যায় ও দেশপ্রেমকে মূলমন্ত্র করে।

নীতির রাজনীতি ও রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ

যে রাষ্ট্রে নীতি রাজনীতির শাসক হয়, সেখানে উন্নয়ন টেকসই হয়, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়, এবং নাগরিকের মর্যাদা অক্ষুণ্ণ থাকে।
রাজনীতিতে নীতির শাসন ফিরলে—

দুর্নীতি কমবে,

প্রশাসনে নিরপেক্ষতা আসবে,

বিচার বিভাগে আস্থা ফিরবে,

এবং জনগণের নিরাপত্তা ও কল্যাণ নিশ্চিত হবে।

এভাবে রাজনীতি যদি তার আসল অর্থে ফিরে আসে, তাহলে রাষ্ট্র হবে জনগণের। আর জনগণই হবে রাজনীতির প্রকৃত মালিক।

শেষকথা

রাজনীতি কোনো রাজা বা বংশের উত্তরাধিকার নয়, এটি একটি দায়িত্ব, একটি পবিত্র আমানত।
রাজনীতি মানে অন্যকে শাসন নয়, বরং নিজের অহংকারকে নিয়ন্ত্রণ করে জনকল্যাণে আত্মনিবেদন করা।
রাজনীতি মানে রাজার নীতি নয়, রাজনীতি নীতির রাজা—এই বোধ যদি আমাদের নেতাদের হৃদয়ে জাগ্রত হয়, তাহলে দুর্নীতি, বৈষম্য, ও অন্যায় থেকে মুক্ত হয়ে আমরা গড়তে পারব এক ন্যায়ের বাংলাদেশ—যেখানে রাজনীতি হবে মানবতার সেবা, আর নীতি হবে তার সর্বোচ্চ রাজা।

আল আমিন মিলু
আহ্বায়ক
গনঅধিকার পরিষদ সরিষাবাড়ি উপজেলা শাখা
জামালপুর

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার অপরাধ।
ওয়েবসাইট ডিজাইন: ইয়োলো হোস্ট