প্রদীপ চন্দ্র মম
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর ইতিহাসে ব্যারিস্টার আব্দুস সালাম তালুকদার এমন এক নাম, যিনি রাজনীতি, আইন এবং সাংগঠনিক নেতৃত্বের সমন্বয়ে দলকে এগিয়ে নিয়েছিলেন। তাঁর কর্মময় জীবনের প্রতিটি অধ্যায় সংগ্রাম, ত্যাগ ও আদর্শের প্রতিচ্ছবি।
১৯৩৬ সালের ৪ নভেম্বর জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ীর মুলবাড়ি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন আব্দুস সালাম তালুকদার। শৈশব থেকেই তিনি ছিলেন মেধাবী ও উদ্যমী। আইন বিষয়ে উচ্চশিক্ষা অর্জন করে ব্যারিস্টারি ডিগ্রি লাভ করেন এবং পেশাগত জীবন শুরু করেন একজন সফল আইনজীবী হিসেবে।
স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে জাতীয় রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হন তিনি। বিএনপির প্রতিষ্ঠার পর থেকেই তিনি ছিলেন দলের অন্যতম প্রভাবশালী সংগঠক। ধীরে ধীরে তিনি মহাসচিবের আসনে অধিষ্ঠিত হন এবং দলের সাংগঠনিক উন্নয়নে রাখেন অনন্য ভূমিকা।
ব্যারিস্টার সালাম তালুকদার বিএনপির মহাসচিব থাকাকালে দলকে সুশৃঙ্খল ও শক্তিশালী করতে কাজ করেছেন। রাজনৈতিক আন্দোলন, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার সংগ্রাম কিংবা সাংগঠনিক সঙ্কটে তিনি ছিলেন এক দৃঢ় নেতৃত্বের প্রতীক। কর্মীদের কাছে তিনি ছিলেন সাহস ও প্রেরণার উৎস।
তিনি একাধিকবার জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। সংসদে সাধারণ মানুষের সমস্যা তুলে ধরা, গণমানুষের উন্নয়ন নিশ্চিত করা এবং প্রশাসনকে গণমুখী করার লক্ষ্যে তিনি নিরলসভাবে কাজ করেছেন।
সততা, দৃঢ়তা ও মানবিক গুণে তিনি আলাদা হয়ে উঠেছিলেন। সাধারণ কর্মী থেকে শীর্ষ নেতাদের সবার কাছে সমানভাবে গ্রহণযোগ্য ছিলেন তিনি। ব্যক্তিজীবনে সরল, ত্যাগী ও আদর্শবান হওয়ায় তাঁর প্রতি মানুষের ভালোবাসা ছিল অগাধ।
১৯৯৯ সালের ২০ আগস্ট তিনি সিঙ্গাপুরে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে যাত্রাকালে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মৃত্যুবরণ করেন। মাত্র ৬৩ বছর বয়সে তাঁর প্রয়াণ বিএনপি তথা জাতীয় রাজনীতির জন্য ছিল এক অপূরণীয় ক্ষতি।
আজও বিএনপি পরিবার তাঁকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে। তিনি ছিলেন এক নেতা, যিনি প্রমাণ করেছেন রাজনীতি মানেই কেবল ক্ষমতা নয়—বরং জনগণের কল্যাণ, গণতন্ত্র ও আদর্শের জন্য আজীবন সংগ্রাম।
“ব্যারিস্টার আব্দুস সালাম তালুকদার ছিলেন সততা ও নৈতিকতার প্রতীক। তাঁর নেতৃত্ব বিএনপি এবং দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।”
লেখক :- কবি ও সাংবাদিক।