কামরুল হাসান: ‘
উস্তাদ মিলে যথা তথা/ শিষ্য মিলা বিষম দায়/ চল মন গুরুর পাঠশালায়।’ হালে সবাই যেন উস্তাদ সেজে বসে আছেন। কেউ আর শিষ্য হতে চান না। শিষ্য হলে তার যেন আর সম্মান থাকবে না। উস্তাদ কথাটা যেমন সম্মানের তেমন একটু হলেও উস্তাদির ভাব লেগে আছে তাতে । তাই সবাই উস্তাদ হওয়ার চেয়ে বরং উস্তাদ সাজার প্রতিযোগিতায় নামতেই ব্যস্ত। কারণ-উস্তাদ সাজা সহজ, হওয়া বড়ই কঠিন। ‘ বিশ^জোড়া পাঠশালা মোর সবার আমি ছাত্র।’ কবি নিজেই যেখানে এ বিশ^টাকে এক পাঠশালার সাথে তুলনা করেছেন। আর নিজেকে সবার ছাত্র বলে মেনে নিয়েছেন। এখানে আমিই বা কোন ছার! তাই আমার শিষ্যত্ব আর ছাত্রত্ব বরণ করতে কোনই দ্বিধা নেই। যদি উপযুক্ত উস্তাদ মিলে যায়। ‘ কথায় কথা বাড়ে মাখনে বাড়ে ঘি। আবার মাংসে মাংস বৃদ্ধি দুধে বাড়ে বল, ঘিতে বুদ্ধি বাড়ে শাকে বাড়ে মল।’ একদিন এক প্রয়োজনে হঠাৎ এক আত্মীয়ের বাসায় গিয়ে দেখি-হালের এক উস্তাদ (গৃহ শিক্ষক) আত্মীয়ের বাড়ীর এক ক্ষুদে পÐিতকে (শিশু শিক্ষার্থী) পড়াচ্ছেন। ওই শিক্ষার্থী খাতায় পাখি লেখতে গিয়ে পাখী লেখে ফেলেছে। এতে ওই উস্তাদ (গৃহ শিক্ষক) রেগে মেগে অস্থির। সাথে চাপা স্বরে কয়েক দফা ধমকও। উস্ত্দ এটাই বুঝাতে চাইছেন যে, তিনি খুবই ভালো পড়ান। তাই সামান্য ভুলও নজর এড়ায় না। পক্ষান্তরে আগুন্তক বা মেহমানও (লেখক) যাতে তার তারিফ বা প্রশংসা করেন। এতে অন্তত: সামনের মাসে কিঞ্চিত হলেও পারিশ্রমিক বাড়বে। পরক্ষনেই তার সে আশায় গুড়েবালি। যখন তিনি পড়ানোর পাঠ চুকিয়ে বাসা থেকে তার গন্তব্য রওনা দেন। তাকে থামানো হলো। বসতেও বলা হলো। মৃদুস্বরে বলা হলো-ওই শিশু শিক্ষার্থীটিকে ধমকালেন কেন? তিনি আনন্দে আত্মহারা হয়ে গদ গদ অবস্থা আর কি। পরে ওই শিক্ষার্থীর ভুলের ব্যাখ্যা দেন। হেসে বললাম তাকে, ছাত্রের ভুলের চেয়ে শিক্ষকের ভুলের মাত্রাটা সামান্য বেশিই মনে হচ্ছে। তিনি বাজখাই কণ্ঠে বললেন, কেমন করে? উত্তরে বললাম, পাখী বানান বা শব্দটি সঠিক যেমন করে! তিনি এবার একটু চেঁচিয়েই বললেন, আপনি কি আমাকে (তাকে) নতুন করে শেখাতে চাচ্ছেন? সবিনয়ে জবাব দিলাম না ভাই। তবে- পাকি, পাখি, পাখী, পঙ্খি, পক্ষী ও পক্বি শব্দগুলোর কোনটি সঠিক? এবার তিনি রীতিমত থ মেরে গেলেন। সাথে সাথেই আবার তাকে বললাম, ‘গজ গজে গজে গজে।’ এটি একটি স্বার্থক বাক্য। এর তিনটি পৃথক প্রয়োগিক (বাক্যানুসারে) অর্থসহ ব্যাখ্যা করে বুঝান তো? এবার যেন তিনি আকাশ থেকে পড়লেন। অতএব, শেখার বা জানার কোন বয়েস নেই। সুতরাং আমি এখনও শিষ্যত্ব আর ছাত্রত্ব বরণ করতে চাই। তবে উপযুক্ত উস্তাদ মিলে গেলে কোনই দ্বিধা বা আপত্তি নেই। ( লেখক: ডিরেক্টর- বাংলাদেশ সেন্ট্রাল প্রেসক্লাব, ঢাকা এবং সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী, ফিচার-কলাম লেখক আর সাবেক শিক্ষক আর ও এনজিও কর্মকর্তা)।
কামরুল হাসান
০১৯১৪-৭৩৫৮৪২