নিজস্ব প্রতিবেদক
গণতন্ত্র কোনো মুখের বুলি নয়, এটি একটি পরিপূর্ণ ব্যবস্থা, যেখানে জনগণই শেষ সিদ্ধান্তের মালিক। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, যদি একটি রাষ্ট্রের সংবিধানই সৈরতান্ত্রিক ধারায় গঠিত হয়, সেখানে ব্যক্তি-স্বেচ্ছাচার, দলীয় কর্তৃত্ব এবং রাষ্ট্রীয় দমননীতিকে আইনগত বৈধতা দেওয়া হয়—তাহলে কি সেই কাঠামোর ভেতরে থেকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার সম্ভব?
আমরা যদি বাস্তবচিত্রের দিকে তাকাই, দেখতে পাই—বাংলাদেশসহ অনেক রাষ্ট্র এমন এক সংবিধানের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে যেখানে ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ স্পষ্ট, ভারসাম্য নেই, জবাবদিহিতা দুর্বল এবং জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ সংকুচিত। একদিকে নির্বাহী বিভাগের সীমাহীন ক্ষমতা, অন্যদিকে নির্বাচন কমিশন, বিচার বিভাগ, প্রশাসন সবই কার্যত শাসকগোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে। এ সংবিধান কার্যত গণতন্ত্র নয়, বরং এক ব্যক্তিকেন্দ্রিক বা দলকেন্দ্রিক কর্তৃত্বের ছাঁচে গড়া।
তাই প্রশ্ন ওঠে, এমন এক কাঠামোর ভেতরে থেকে কীভাবে একটি সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক, জনগণকেন্দ্রিক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব? ইতিহাস বলে—না, তা সম্ভব নয়। সৈরতান্ত্রিক সংবিধান দিয়ে গণতন্ত্রের সাজগোজ করা যায়, কিন্তু বাস্তবায়ন করা যায় না। কারণ, সেই কাঠামোই গণতন্ত্রের মূল প্রতিপক্ষ।
গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে হলে প্রথমেই দরকার সংবিধান সংস্কার। এমন এক সংবিধান দরকার যেখানে—
ক্ষমতার ভারসাম্য থাকবে,
নির্বাচন কমিশন হবে সম্পূর্ণ স্বাধীন,
বিচার বিভাগ হবে নির্বিঘ্ন,
জনগণের মতপ্রকাশ ও সমাবেশের অধিকার থাকবে নিশ্চিত,
রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও প্রশাসন থাকবে নিরপেক্ষ,
আর দলীয় সরকারের বদলে থাকবে তত্ত্বাবধায়ক ধরনের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ব্যবস্থা।
এছাড়া প্রয়োজন একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতি, যেখানে বিরোধীদলকে শত্রু নয়, অংশীদার হিসেবে দেখা হবে।
অতএব, সৈরতন্ত্রের ছায়াতলে গণতন্ত্রের ফুল ফোটে না। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে হলে, কেবল সরকার নয়—রাষ্ট্র কাঠামো, সংবিধান, প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক চেতনা—সবই বদলাতে হয়। না হলে, গণতন্ত্র কেবল ভোটের দিনে ব্যালট বাক্সে আটকে থাকবে, আর বাকী বছর চলবে নিপীড়ন, দুর্নীতি আর জনবিচ্ছিন্ন শাসন।
গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হলে, প্রথমেই দরকার এক নতুন রূপরেখা—যেখানে মানুষ হবে মুখ্য, দল নয়। সংবিধান হবে মানুষের অধিকার রক্ষার দলিল, শাসকের স্বেচ্ছাচার বৈধ করার দলিল নয়।
সৈরতন্ত্র দিয়ে নয়, জনগণের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়েই সম্ভব গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার।