নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশের রাজনীতি, প্রশাসন, এমনকি সমাজের প্রতিটি স্তরেই আজ এক অদ্ভুত প্রতিচ্ছবি—সুবিধাভোগীদের এক শ্রেণি সুযোগের সন্ধানে সদা ব্যস্ত, আর তাদের দৌরাত্ম্যে অসহায় হয়ে পড়ে সাধারণ জনগণ। এ যেন এক প্রাত্যহিক যুদ্ধ, যেখানে একজন দরিদ্র কৃষক, একজন রিকশাচালক, কিংবা একজন মেহনতি মানুষ প্রতিদিন বঞ্চনার শিকার হয়ে দাঁড়ায় প্রভাবশালীদের স্বার্থসিদ্ধির সিঁড়ি হিসেবে।
যখন রাষ্ট্রের বা সমাজের কোনো সংকট আসে, তখন এই সুযোগ সন্ধানীরা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। তারা দুর্যোগকেও নিজের সম্পদ বৃদ্ধির উপায় মনে করে। ত্রাণে হোক, অনুদানে হোক বা চাকরি-বাণিজ্যে—সবখানে তাদের হাত থাকে লম্বা। সাধারণ মানুষ যখন বন্যায় গৃহহারা হয়, তখন এই সুবিধাভোগীরা ত্রাণের মালামাল ‘ব্যবস্থাপনা’র নামে গায়েব করে দেয়। গরিবের হক চুরি করে তারা নিজের সম্পদ বাড়ায়।
জনগণের জন্য বরাদ্দকৃত স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা বা কৃষি সহায়তা—কোথাও প্রকৃত প্রাপকের নাগাল সহজ নয়। কারণ, সেখানে আগে পৌঁছে যায় ‘নিজেদের লোক’ নামধারী সুবিধাভোগীরা। তারা ফাইলের নিচে টাকা গুঁজে, পদে-পদে প্রভাব খাটিয়ে গরিব মানুষের ভাগ্য নিয়ে খেলে। একদিকে ক্ষুধার্ত মানুষ সাহায্যের আশায় চোখ তুলে তাকিয়ে থাকে, অন্যদিকে কোনো কোনো নেতার ছেলে বা আত্মীয় মেলে ফেলে চাকরি, প্রজেক্ট, বরাদ্দ।
দুঃখজনক হলেও সত্য, এই সুযোগ সন্ধানীদের অধিকাংশই আমাদের সমাজের ‘সম্মানিত’ ব্যক্তি—প্রাক্তন ছাত্রনেতা, জনপ্রতিনিধি, এমনকি ধর্মীয় মুখোশধারী অনেকে। যারা মুখে নীতির কথা বলেন, কিন্তু ভেতরে সিস্টেমকে গিলে খায় প্রতিদিন। সাধারণ মানুষ আজ অসহায়। কারণ, এই গোষ্ঠী প্রশাসনের সাথে আঁতাত করে, রাজনীতির সুযোগ নেয় এবং সর্বোপরি ‘বিচারের অভাব’ নামক অন্ধকারে নিজেকে নিরাপদ ভাবে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে—এই অন্যায়, এই স্বজনপ্রীতি, এই সুবিধাবাদ থামবে কীভাবে?
সমাধান একটাই—সচেতন জনগণের ঐক্য এবং প্রতিরোধ। জনগণ যদি নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হয়, যদি তারা সাহস করে প্রশ্ন তোলে, যদি তারা স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে কথা বলে—তবে এই সুবিধাভোগীদের মুখোশ খুলে যাবে। প্রয়োজন সৎ নেতৃত্ব, জবাবদিহিমূলক প্রশাসন এবং শক্তিশালী গণমাধ্যম।
এই দেশে প্রকৃত প্রাপকের হাতে যেন সহায়তা পৌঁছে যায়, সেই স্বপ্নই হোক আমাদের সংগ্রামের পাথেয়। সুবিধাবাদীদের নয়—মানবিক মূল্যবোধ, ন্যায়ের জয় হোক আমাদের সমাজের মূল চালিকাশক্তি।
সাধারণ মানুষের চোখের জল একদিন আগুন হয়ে উঠবে—এটাই ইতিহাসের শিক্ষা।
—
✍️ আল আমিন মিলু
আহ্বায়ক, গণঅধিকার পরিষদ
সরিষাবাড়ি উপজেলা শাখা, জামালপুর