কামরুল হাসান:
জামালপুর সদর উপজেলার দিগপাইত ইউনিয়নের ডোয়াইলপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি এখন নানা সমস্যায় জড়িত হয়ে পড়েছে। উদ্বুত নানা সমস্যার জরুরী সমাধান চায় এলাকাবাসী। এ বিষয়ে যেন কারও কোন জোরালো ভ‚মিকা নেই। সাংবাদিককে তথ্য ও বক্তব্য দিতে অনিহা প্রকাশ করলেন সংশ্লিষ্ট সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষসহ প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছে সচেতন মহল।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১১৭ নং ডোয়াইলপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৯৪০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৭৩ সালে এটির সরকারী করন হয়। ২০১৩-২০১৪ অর্থ বছরে পিডিপি-৩ প্রকল্পের আওতায় বিদ্যালয়টির নতুন ভবন নির্মিত হয়। বিদ্যালয়টিতে পদ সংখ্যা ৫। বর্তমানে কর্মরত শিক্ষক সংখ্যা ৪ জন। তবে দীর্ঘ দিন ধরে প্রধান শিক্ষকের পদটি শূন্য রয়েছে। সহকারী শিক্ষক বিউটি খাতুন বিগত ৩১ মার্চ, ২০১৫ হতে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংখ্যা মাত্র ৮৭ জন। এর মধ্যে বালক ৩৭ জন আর ৫০ জন বালিকা। বিধি মোতাবেক প্রতি ৪০ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে ১ জন করে শিক্ষক থাকার কথা। সে মোতাবেক এ বিদ্যালয়ে ২ জন শিক্ষক হলেই চলে। অথচ এখানে জেসমিন আক্তার, সবিতা দেব নাথ ও ফারহানা আক্তার জান্নাতসহ মোট ৪ জন শিক্ষক কর্মরত রয়েছেন। সুতরাং এ বিদ্যালয়ে ২ জন শিক্ষক অতিরিক্ত রয়েছে। বলতে গেলে সংশ্লিষ্ট দপ্তর বা বিভাগ অতিরিক্ত ২ জন শিক্ষককে বসিয়ে পোষছে। অবশ্য ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বিউটি খাতুন শিক্ষার্থী সংখ্যা কমের বিষয়ে আশেপাশে নতুন নতুন কেজি স্কুল ও মাদ্রাসা গড়ে ওঠাকে মূল কারন হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। আরেকটি কারন হিসেবে অনুন্নত রাস্তা ঘাটের কথাও উল্লেখ করছেন প্রতিষ্ঠান প্রধান। বিশেষ করে বিদ্যালয়ের যাতায়াতের নিজস্ব রাস্তাটি নিচু হওয়ায় বৃষ্টি বা বর্ষা মেসৈুমে কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীদের অনেকটাই দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বিদ্যালয়টির টিনসেট পুরাতন ভবনটি অনেক দিনকার হওয়ায় বর্তমানে ঝুঁকিপূর্নের তালিকায় রয়েছে। অপর দিকে আঙ্গিনায় লাগানো বিভিন্ন ফলদ ও বনজ বৃক্ষের মধ্যে বেশ কয়েকটি বয়স্ক গাছের ভেতরের অংশ পোকায় খেয়ে ফেলেছে। পোকায় খাওয়া গাছের ছিদ্র দিয়ে বৃষ্টির পানি ঢুকে পঁচেও গেছে। তাই ঝড় বৃষ্টি ও বাতাসে যে কোন সময় ভেঙ্গে পড়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। ২০২৫ সালে দুই দফায় ¯øীপের ৭০ হাজার টাকা বরাদ্দ আসে। তন্মধ্যে ১ম দফায় শুধুমাত্র ৩৩ হাজার টাকা পেয়েছেন। আর ২য় দফায় মাত্র ১৫ হাজার টাকা পাওয়া যাবে বলে জানান প্রতিষ্ঠান প্রধান বিউটি খাতুন। ৩৩ হাজার আর ১৫ হাজার মিলে হয় ৪৮ হাজার টাকা। বাকী টাকার বিষয়ে ৮ হাজার টাকাতো ভ্যাটই চলে গেছে। এছাড়া অফিস থেকে নাকি ৪ লাখ টাকা চুরি হয়ে গেছে। তাই চুরি হওয়া টাকার হিসেব মিলাতে কেটে নিয়েছে। এমন তথ্য জানালেন প্রতিষ্ঠান প্রধান বিউটি খাতুন। এছাড়া তিনি জানান, ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে মেরামত প্রকল্পের আওতায় ২ লাখ টাকা বরাদ্দ আসে। তা থেকে ২৬ হাজার টাকা ভ্যাটই চলে যায়। বারান্দার গ্রীল, কেচিগেইট, সেলফ ক্রয়সহ আনুষাঙ্গিক কাজ করা হয়েছে। কাজের মান নিয়ে এলাকায় নানা সমালোচনা অব্যাহত রয়েছে। সচেতন মহল তৎকালীন এসএমসি’র সভাপতি ও জমিদাতা এবং ছোনটিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক আঃ সালাম মাস্টার কাজ সম্পাদন করেন। স্থানীয়দের মুখে মুখে এখনও রটে যে, ওই সময় বর্তমানে নিষিদ্ধ একটি রাজনৈতিক সংগঠনের নেতা-কর্মীদের সাথে হাত মিলিয়ে সালাম মাস্টার কাজে ফাঁকি দিয়ে টাকা-পয়সা আত্মসাৎ করেছে।
এ ছাড়া বিদ্যালয়টির নামে ০.৫০ শতাংশ জমি থাকলেও দখলে রয়েছে ০.৩৩ শতাংশ। অবশিষ্ট জমি দাতারাই বেদখল করে রেখেছে। উল্লেখ্য, জমিদাতা ও সাবেক এসএমসি সভাপতি আঃ সালাম মাস্টার নিজেই বিদ্যালয়ের নামে দানকৃত জমি নিজের ভোগ দখলে রেখেছেন। এ নিয়ে স্থানীয়রা চাপ সৃষ্টি করলে কিছুটা ছেড়ে দেয়। এখনও আরও কিছু পরিমান জমি তার দখলে রয়েছে। তিনি ছাড়াও অপর দাতাদের কেউ কেউ একই কায়দায় জমি বেদখল করে রেখেছে। একটি কথা না বললেই নয়, স্থানীয় মৃত ছাবেদ আলী মেম্বার ও মৃত খুশি মন্ডলের মধ্যে অনেক দিন আগে কিছু পরিমান জমি মৌখিক রেওয়াজ করা হয়। মৃত ছাবেদ আলী মেম্বার ওই জমি থেকে ০.১৮ শতাংশ জমি বিদ্যালয়ের নামে দান করে। প্রকৃত পক্ষে দানকৃত ওই জমির বৈধ মালিক মৃত খুশি মন্ডলের ওয়ারিশগন। এ সব নিয়ে তেমন কোন মাথা ব্যথা নেই কর্র্তৃপক্ষসহ উর্ধ্বতনদের। বর্তমানে বিদ্যালয়টির বাউন্ডারী নেই। এর চাহিদাও দেয়া আছে। আশ^াসও পাওয়া গেছে। তাহলে বিদ্যালয়ের জমি বাইরে রেখেই কি বাউন্ডারী নির্মান করা হবে? এ সব বিষয় নিয়ে এলাকাবাসীর মনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এ সব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দিগপাইত ক্লাস্টারের সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রিমু আক্তারের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি তথ্য ও বক্তব্য দিতে পারবেন না মর্মে অনিহা প্রকাশ করে বলেন, আপনার যা জানার আছে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট থেকে জেনে নিন। (লেখক: কামরুল হাসান, ডিরেক্টর-বাংলাদেশ সেন্ট্রাল প্রেসক্লাব, ঢাকা। মানবাধিকার কর্মী, সাংবাদিক, ফিচার ও কলাম লেখক এবং সাবেক শিক্ষক ও এনজিও কর্মকর্তা)
কামরুল হাসান
০১৯১৪-৭৩৫৮৪২