নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশ আজ এক গভীর রাজনৈতিক সংকটে নিমজ্জিত। নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক, বিরোধী দলের প্রতি দমনমূলক আচরণ,ছোট ছোট রাজনৈতিক দলের সাথে বৈষম্য, প্রশাসনের পক্ষপাতদুষ্ট ভূমিকা এবং সাধারণ জনগণের রাজনৈতিক উদাসীনতা—সব মিলিয়ে রাজনৈতিক অচলাবস্থা ক্রমেই দীর্ঘায়িত হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে অনেক বিশ্লেষক এবং সচেতন নাগরিক জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব তুলে ধরছেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, জাতীয় সরকারই কি এই সংকটের সহজ এবং কার্যকর সমাধান?
জাতীয় সরকারের ধারণা কী?
জাতীয় সরকার বলতে এমন একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বোঝায়, যেখানে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলসমূহ থেকে প্রতিনিধিরা যুক্ত হয়ে একটি নিরপেক্ষ, অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রশাসন গঠন করেন। এই সরকার সাধারণত সীমিত সময়ের জন্য গঠিত হয় এবং তার মূল দায়িত্ব থাকে সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক এবং বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করা।
চলমান সংকটের বাস্তবতা
বর্তমান রাজনৈতিক ব্যবস্থায় সরকার ও বিরোধী দল গুলোর মধ্যে কোনো আস্থা নেই। একটি দল ভাবছে তারা ক্ষমতা পেয়ে গেছে।দেশের সব সুযোগ সুবিধা তারাই ভোগকরার চেষ্টা করছে।অন্যন্য রাজনৈতিক দলগুলো মনে করছে এরা ক্ষমতায় গেলে আবার সৈরশাসন কায়েম হবে।জুলাইয়ের বিপ্লব বৃথা যাবে। তারা জোরযার মূল্লুক তার এটাকে পুজি করে প্রশাসনকে ব্যবহার করে বিরোধী কণ্ঠকে দমন করছে বলে অভিযোগ; এই পরিস্থিতিতে সাধারণ জনগণ রাজনীতিকে ভয় বা বিরক্তির চোখে দেখছে। ফলে গণতন্ত্রের ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়ছে।
জাতীয় সরকারের প্রয়োজনীয়তা ও সুফল
১. আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি: জাতীয় সরকার গঠন হলে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিশ্বাস ফিরতে পারে, কারণ কেউ এককভাবে ক্ষমতায় থাকবে না।
২. নির্বাচন প্রক্রিয়ার গ্রহণযোগ্যতা: নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জাতীয় সরকারের অধীনে তুলনামূলক নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারবে।
৩. অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা: রাজনৈতিক উত্তেজনা কমলে বিনিয়োগ বাড়বে, অর্থনীতি কিছুটা স্বস্তি পাবে।
৪. জনগণের আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা: রাজনীতি ও নির্বাচনী ব্যবস্থার প্রতি জনআস্থা বাড়বে।
চ্যালেঞ্জ ও প্রতিবন্ধকতা
১. সংবিধানগত বাধা: সংবিধানে জাতীয় সরকার গঠনের কোনো বিধান নেই। এর জন্য সাংবিধানিক সংশোধনের প্রয়োজন পড়বে।
২. ক্ষমতা ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্ব: কোন দল কতটুকু ক্ষমতা পাবে, তা নিয়ে নতুন করে দ্বন্দ্ব শুরু হতে পারে।
৩. সামরিক বা অনির্বাচিত গোষ্ঠীর হস্তক্ষেপের ঝুঁকি: জাতীয় সরকার দীর্ঘায়িত হলে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
উপসংহার
জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব নিঃসন্দেহে একটি গ্রহণযোগ্য এবং যুক্তিসম্মত রাজনৈতিক সমাধান হতে পারে, যদি তা রাজনৈতিক সদিচ্ছার ভিত্তিতে গঠিত হয়। এটি অস্থায়ী হলেও দেশের গণতান্ত্রিক ধারাকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে সহায়ক হতে পারে। তবে এটি কোনো জাদুকাঠি নয়—এর সফলতা নির্ভর করবে দলগুলোর আন্তরিকতা, পারস্পরিক সম্মান এবং জনগণের অংশগ্রহণের ওপর।
আমাদের এখন প্রয়োজন সহনশীলতা, সংলাপ এবং সমঝোতা। যদি এই তিনটি উপাদান থাকে, তবে জাতীয় সরকার গঠনের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক সংকটের একটি কার্যকর ও শান্তিপূর্ণ সমাধান খুঁজে পাওয়া অসম্ভব নয়।
-আল আমিন মিলু
আহ্বায়ক
গনঅধিকার পরিষদ
সরিষাবাড়ি উপজেলা শাখা
জামালপুর