নিজস্ব প্রতিবেদক 

বাংলাদেশ একটি সম্ভাবনাময় দেশ। এ দেশের মানুষ সংগ্রামী, পরিশ্রমী এবং আবেগপ্রবণ। কিন্তু এ আবেগ যখন হুজুগে পরিণত হয়, আর তথ্যহীনতা যখন গুজবে রূপ নেয়, তখন তা জাতিগতভাবে আমাদের ভাবমূর্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। আজকের প্রবন্ধে আলোচনা করব—কিভাবে হুজুগ ও গুজব আমাদের সমাজ, সংস্কৃতি এবং আন্তর্জাতিক মর্যাদায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

হুজুগ: আবেগের অপব্যবহার
বাংলাদেশে হুজুগে মাতার প্রবণতা নতুন নয়। ক্রিকেট জয় হোক কিংবা নতুন কোনো পণ্যের আগমন—একটা অন্ধ আবেগে মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়ে। অনেক সময় না বুঝে, যাচাই না করেই আমরা কোনো ইস্যুতে ‘ট্রেন্ডে’ গা ভাসাই। এ প্রবণতা আমাদের চিন্তাশীলতা, যুক্তিভিত্তিক বিশ্লেষণ এবং স্থিরচিন্তার প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠতে দেয় না। ফলে আমাদের জাতীয় চরিত্রে এক ধরনের অপরিপক্বতা প্রতিফলিত হয়, যা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমাদের মূল্যায়নকে কমিয়ে দেয়।

গুজব: তথ্যের শূন্যতায় বিভ্রান্তি
গুজব হলো ভুল তথ্যের মাধ্যমে সমাজে ভীতি, বিভ্রান্তি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোনো একটি ভিত্তিহীন খবর ভাইরাল হলে সমাজে হঠাৎ অস্থিরতা দেখা দেয়। গুজবের কারণে পিটুনিতে মৃত্যু, দাঙ্গা, কিংবা গণআতঙ্কের ঘটনা এ দেশে বহুবার ঘটেছে। তথ্য যাচাই না করে খবর বিশ্বাস করা এবং ছড়িয়ে দেওয়া আমাদের নাগরিক দায়িত্ববোধের ঘাটতিকে প্রকাশ করে।

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রভাব
হুজুগ ও গুজব শুধু ব্যক্তি বা সমাজ পর্যায়ে সীমাবদ্ধ থাকে না। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এ দুটি প্রবণতা আমাদের জাতিগত পরিপক্বতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। একটি জাতি যখন গুজবে বিভ্রান্ত হয় এবং হুজুগে মাতোয়ারা হয়, তখন তাদের উপর আস্থা রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। এর ফলে বিদেশি বিনিয়োগ, কূটনৈতিক সম্পর্ক ও আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা হুমকির মুখে পড়ে।

সমাধানের পথ
১. শিক্ষা ও সচেতনতা: গুজব প্রতিরোধে গণমাধ্যমে ও শিক্ষাক্ষেত্রে তথ্য যাচাইয়ের গুরুত্ব শেখাতে হবে।
২. নাগরিক দায়িত্ববোধ: প্রতিটি নাগরিককে দায়িত্ব নিতে হবে তথ্য যাচাইয়ের এবং হুজুগে গা না ভাসানোর।
৩. সরকারি হস্তক্ষেপ: গুজব ছড়ানো রোধে দ্রুত ও বিশ্বাসযোগ্য তথ্য সরবরাহের উদ্যোগ নিতে হবে।
৪. প্রযুক্তির সদ্ব্যবহার: সোশ্যাল মিডিয়াকে গঠনমূলক ও সত্যভিত্তিক তথ্য ছড়ানোর মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করতে হবে।

উপসংহার
হুজুগ আর গুজব—এই দুটি আমাদের সামাজিক স্থিতিশীলতা ও আন্তর্জাতিক মর্যাদার অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখনই সময় ব্যক্তিগত, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সচেতন হয়ে এই প্রবণতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা। জাতি হিসেবে মর্যাদা ধরে রাখতে হলে যুক্তিনির্ভর, তথ্যভিত্তিক ও দায়িত্বশীল আচরণই আমাদের একমাত্র পথ।

আল আমিন মিলু
আহ্বায়ক
গনঅধিকার পরিষদ
সরিষাবাড়ি উপজেলা শাখা