নিজস্ব প্রতিবেদক
বর্তমান বিশ্ব প্রযুক্তির চরম উৎকর্ষতায় পৌঁছেছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে আমরা আজ অনেকদূর এগিয়ে গেছি। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এখনো জুলুম, দখলদারিত্ব, টেন্ডারবাজি, ঘুষ ও চাঁদাবাজির মতো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড সমাজকে ভেতর থেকে ক্ষয় করে চলেছে। এই পরিস্থিতিতে প্রযুক্তির সদ্ব্যবহার করে একটি কার্যকর অনলাইন অভিযোগ ব্যবস্থা চালু করা ও তার ভিত্তিতে দ্রুত এবং স্বচ্ছ তদন্তের জন্য একটি নতুন আইন প্রণয়ন সময়ের দাবি হয়ে উঠেছে।
সমস্যার বিশ্লেষণ:
আমাদের দেশে অনেক সময় দুর্নীতির বিরুদ্ধে তথ্য থাকা সত্ত্বেও ভয়ে, হয়রানির আশঙ্কায় অথবা ব্যবস্থাপনার জটিলতার কারণে কেউ অভিযোগ করেন না। যারা করেন, তাদের অভিযোগ আমলযোগ্য হয়ে ওঠে না অথবা দীর্ঘসূত্রতায় তা চাপা পড়ে যায়। বিশেষ করে রাজনৈতিক প্রভাব, প্রশাসনিক দুর্বলতা ও বিচারিক দেরি এসব অনিয়মকে প্রশ্রয় দেয়।
প্রযুক্তি কীভাবে সহায়তা করতে পারে:
বর্তমানে অধিকাংশ মানুষ স্মার্টফোন ও ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন। অনলাইন ভিত্তিক অভিযোগ গ্রহণের একটি কেন্দ্রীয় প্ল্যাটফর্ম থাকলে নাগরিকরা সহজেই ভিডিও, অডিও বা ডকুমেন্ট আকারে তথ্য আপলোড করতে পারবেন। এতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রাথমিক তথ্য-প্রমাণ সংরক্ষণের পাশাপাশি তদন্ত প্রক্রিয়াও স্বচ্ছ হবে। প্রয়োজনে অভিযোগকারীর পরিচয় গোপন রাখার ব্যবস্থা থাকলে এটি আরও কার্যকর হবে।
প্রস্তাবিত আইনের মূল দিকসমূহ:
১. অনলাইন অভিযোগ কেন্দ্র (Digital Complaint Portal): সরকার পরিচালিত একটি ওয়েবসাইট ও অ্যাপ যেখানে নাগরিকরা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের প্রমাণ সহ অভিযোগ জমা দিতে পারবেন।
২. স্বতন্ত্র তদন্ত কমিটি: প্রতিটি অভিযোগ যাচাইয়ের জন্য একটি স্বাধীন ও বিশেষায়িত তদন্ত ইউনিট গঠিত হবে।
৩. সুরক্ষা বিধান: অভিযোগকারী ও সাক্ষীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে আইন অনুযায়ী।
৪. দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া: অনলাইন অভিযোগের প্রমাণ ভিত্তিতে দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
৫. দণ্ডের বিধান: প্রমাণিত অপরাধের জন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিধান রাখতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে কেউ এ ধরনের অপরাধ করার সাহস না পায়।
উপকারিতা:
সাধারণ জনগণের অংশগ্রহণ বাড়বে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে।
দুর্নীতির হার কমবে।
রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক দুর্বৃত্তায়নের অবসান ঘটবে।
চ্যালেঞ্জ:
মিথ্যা অভিযোগের সম্ভাবনা।
তথ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
তদন্ত ও বিচার ব্যবস্থার দক্ষতা বৃদ্ধি।
সমাধান:
অভিযোগ যাচাইয়ের জন্য প্রাথমিক বাছাই ব্যবস্থা রাখতে হবে।
তথ্য ফিল্টারিং ও অটোমেশন প্রযুক্তি ব্যবহার করা যেতে পারে।
সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রযুক্তিগত ও মানবসম্পদ উন্নয়নের জন্য বাজেট বরাদ্দ দিতে হবে।
উপসংহার:
প্রযুক্তির মাধ্যমে দুর্নীতিবিরোধী লড়াইয়ের পথ সুগম করা আজ সময়ের দাবি। একটি অনলাইন অভিযোগ ও তদন্তভিত্তিক আইন আমাদের সমাজকে আরও ন্যায়ভিত্তিক, স্বচ্ছ ও নিরাপদ করে তুলতে পারে। সরকারের সদিচ্ছা ও জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন সম্ভব। এখন প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও কার্যকর পরিকল্পনার।
আল আমিন মিলু
আহ্বায়ক
গনঅধিকার পরিষদ
সরিষাবাড়ি উপজেলা শাখা