নিজস্ব প্রতিবেদক
শহরের মোড়ে মোড়ে তখন দেশপ্রেমের হাট বসে। মাইক বাজে, ব্যানার ওড়ে, বড় বড় শব্দের ঝলকানিতে মানুষ মুগ্ধ হয়। হাজার মিথ্যা গল্পধারী নিজেদের দেশপ্রেমিক দাবি করে—কারও মুখে দেশ মানে ক্ষমতা, কারও কাছে দেশ মানে লাভ, কারও কাছে দেশ মানে ক্যামেরার সামনে কয়েক মিনিটের অভিনয়।
আর সেই ভিড়ের আড়ালে দাঁড়িয়ে থাকে একজন মানুষ—নামহীন, নিঃশব্দ। সে কখনো মাইক ধরেনি, শ্লোগান দেয়নি। ভাঙা রাস্তার পাশে সে নিজ হাতে ইট বসিয়েছে, রাতের আঁধারে স্কুলের বেঞ্চ মেরামত করেছে, অন্যায় দেখলে ভয় পেয়েও মুখ ফিরিয়ে নেয়নি। কেউ তাকে দেশপ্রেমিক বলে ডাকেনি, সে নিজেও দাবি করেনি।
একদিন বড় এক সভায় সবাই চিৎকার করে বলল, “আমরাই দেশ!” শব্দের ঢেউয়ে আকাশ কেঁপে উঠল। কিন্তু সভা শেষ হতেই তারা গাড়িতে চড়ে চলে গেল, রেখে গেল ময়লা, ভাঙা চেয়ার আর ভাঙা প্রতিশ্রুতি। সেই রাতেই নামহীন মানুষটি আবার বের হলো—ময়লা পরিষ্কার করল, পড়ে থাকা পতাকাটা তুলে ভাঁজ করে রাখল, যেন দেশটাকে কেউ অসম্মান না করে।
ভোরবেলা কেউ তাকে জিজ্ঞেস করল, “তুমি কার পক্ষে?”
সে মুচকি হেসে বলল, “যেদিকে মানুষ বাঁচে, সেদিকেই।”
সেদিন কেউ তার ছবি তুলেনি, কোনো সংবাদ ছাপা হয়নি। কিন্তু দেশের মাটিতে যখন একফোঁটা ঘাম পড়ে ভালোবাসা হয়ে, তখন ইতিহাসের অদৃশ্য পাতায় লেখা থাকে—
আমিই দেশপ্রেমিক।