নিজস্ব প্রতিবেদক
দেশ গঠনের পথে “জুলাই” ছিল এক প্রতিশ্রুতির নাম—স্বচ্ছতা, জবাবদিহি, ন্যায্যতা ও মানুষের মর্যাদা ফিরিয়ে আনার অঙ্গীকার। কিন্তু বাস্তবায়নের জায়গায় এসে আমরা দেখেছি প্রতিশ্রুতি আর প্রক্রিয়ার মধ্যে বিস্তর ফাঁক। এই ফাঁকটাই আজ আমাদের বড় ব্যর্থতার ঠিকানা।
১. রাজনৈতিক সদিচ্ছার ঘাটতি
জুলাইয়ের লক্ষ্য ছিল রাষ্ট্রীয় সংস্কার ও নৈতিক রাজনীতির সূচনা। অথচ ক্ষমতার অঙ্ক কষতে গিয়ে সেই সদিচ্ছা বারবার ক্ষয়ে গেছে। দলীয় স্বার্থ রাষ্ট্রীয় স্বার্থকে ছাপিয়ে গেলে যে কোনো কর্মসূচিই কাগজে বন্দী থাকে—জুলাই তার ব্যতিক্রম হয়নি।
২. প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের বদলে ব্যক্তি-কেন্দ্রিকতা
ব্যবস্থা বদলানোর বদলে আমরা ব্যক্তি বদলে সন্তুষ্ট থেকেছি। শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান গড়া, নিয়ম-কানুনকে প্রাধান্য দেওয়া—এই কাজগুলো কঠিন বলে এড়িয়ে গেছি। ফলাফল: পুরোনো রোগ নতুন নামে ফিরে এসেছে।
৩. অংশগ্রহণমূলক প্রক্রিয়ার অভাব
জুলাই বাস্তবায়নে নাগরিক, পেশাজীবী, স্থানীয় সরকার ও বিরোধী মতকে অর্থবহভাবে যুক্ত করা হয়নি। উপর থেকে চাপানো সিদ্ধান্ত টেকসই হয় না—এ সত্য আমরা আবারও ভুলে গেছি।
৪. স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির দুর্বলতা
লক্ষ্য নির্ধারণ, সময়রেখা, বাজেট ও অগ্রগতি—সবখানেই স্বচ্ছতার অভাব ছিল। জবাবদিহি না থাকলে ভুলের সংশোধন হয় না; বরং ভুলই নিয়মে পরিণত হয়।
৫. আমলাতান্ত্রিক জট ও দক্ষতার সংকট
দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য যে দক্ষতা, সমন্বয় ও দায়বদ্ধতা দরকার ছিল, তা গড়ে ওঠেনি। ফলে ভালো সিদ্ধান্তও জটিলতায় পড়ে ধীরগতির শিকার হয়েছে।
৬. মূল্যবোধের সংকট
জুলাইয়ের প্রাণ ছিল নৈতিকতা। কিন্তু ক্ষমতা ও সুবিধার মোহে মূল্যবোধ বিসর্জন দিলে কোনো আন্দোলনের অর্জন দীর্ঘস্থায়ী হয় না—আমরা সেটাই দেখেছি।
পথ কী?
ভুল স্বীকারই সংশোধনের প্রথম ধাপ। রাজনৈতিক সদিচ্ছা পুনর্গঠন, প্রতিষ্ঠান শক্তিশালী করা, অংশগ্রহণমূলক নীতি প্রণয়ন, কঠোর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি—এই চারটি স্তম্ভে দাঁড়ালেই জুলাইয়ের লক্ষ্য আবার প্রাণ পেতে পারে। দেশ গঠন কোনো একদিনের স্লোগান নয়; এটি ধারাবাহিক শুদ্ধাচার ও দায়িত্বশীলতার পরীক্ষা।
জুলাই আমাদের শেখায়—প্রতিশ্রুতি নয়, প্রক্রিয়াই ভবিষ্যৎ গড়ে। আমরা যদি প্রক্রিয়াকে সৎ করি, দেশ আপনাতেই শক্ত হবে।
আল আমিন মিলু
রাজনৈতিক বিশ্লেষক, গবেষক ও
আহ্বায়ক গনঅধিকার পরিষদ
সরিষাবাড়ি উপজেলা শাখা জামালপুর