নিজস্ব প্রতিবেদক
হাদীর পরাজয় কোনো একক ব্যক্তির হার নয়; এটা আসলে একটি রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতার নাম। যে মানুষটি প্রশ্ন তুলেছিল, অন্যায়ের মুখে দাঁড়িয়েছিল, ক্ষমতার কেন্দ্রে চোখ রেখে কথা বলেছিল—তার হার মানে শুধু একজন কণ্ঠ স্তব্ধ হওয়া নয়, বরং সম্ভাবনার, নৈতিকতার এবং ভবিষ্যতের একটুখানি করে মরে যাওয়া।
এই দেশে রাজনীতি এখন আর আদর্শের লড়াই নয়, এটা টিকে থাকার লড়াই। এখানে সৎ হওয়া দুর্বলতা, প্রতিবাদ করা অপরাধ, আর নীরব থাকা বুদ্ধিমত্তা। হাদী সেই নীরবতার সংস্কৃতিকে ভাঙতে চেয়েছিল বলেই সে পরাজিত। কারণ এদেশে প্রশ্নকারীরা নিরাপদ নয়, নিরাপদ কেবল অনুগতরা।
হাদীর হার আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়—এই রাষ্ট্রে ক্ষমতার বাইরে সত্যের কোনো মূল্য নেই। নির্বাচন, গণতন্ত্র, মতপ্রকাশ—সবই এখন শব্দমাত্র, যার ভেতরে প্রাণ নেই। যে তরুণেরা রাজনীতিকে বদলাতে চায়, তাদের সামনে হাদীর পরিণতি একটি ভয়ংকর বার্তা হয়ে দাঁড়ায়: “চুপ থাকো, না হলে হারিয়ে যাবে।”
সবচেয়ে ভয়াবহ বিষয় হলো, আমরা এই হারকে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক করে নিচ্ছি। একজন হারলে আরেকজন উঠে আসবে—এই আত্মতুষ্টি আসলে আমাদের পরাজয়কে আরও গভীর করে। কারণ যতদিন না রাষ্ট্র তার প্রশ্নকারীদের নিরাপত্তা দিতে পারছে, ততদিন প্রতিটি হাদীর পরাজয় মানেই বাংলাদেশের পরাজয়।
হাদী হেরে গেছে, কারণ সে একা ছিল। আর বাংলাদেশ হেরে যাচ্ছে, কারণ আমরা সবাই একা হয়ে পড়েছি—ভয়ের কাছে, স্বার্থের কাছে, নীরবতার কাছে।
আজ হাদী নেই, কিন্তু প্রশ্নটা রয়ে গেছে:
আগামী হাদী কে?
আর আমরা কি আবারও চুপ থাকবো?
আল আমিন মিলু
রাজনৈতিক বিশ্লেষক গবেষক ও
আহ্বায়ক গনঅধিকার পরিষদ
সরিষাবাড়ি উপজেলা শাখা জামালপুর