নিজস্ব প্রতিবেদক
মা–বাবার মুখে শোনা গল্প, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের আবেগ—এসব নিয়েই একজন মানুষ বড় হয়। কিন্তু সমস্যা শুরু হয় তখনই, যখন এই স্বাভাবিক দেশপ্রেমের মুখোমুখি দাঁড়ায় ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতি, ভালোমানুষের অবমূল্যায়ন আর স্থায়ী নিরাপত্তাহীনতা।
ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতি এই দেশের সবচেয়ে বড় সংকটগুলোর একটি। এখানে আদর্শ নয়, ক্ষমতাই মুখ্য। কে ক্ষমতায় থাকবে, কে টিকে থাকবে—এই হিসাবেই রাজনীতি পরিচালিত হয়। ফলে দেশপ্রেম, ন্যায্যতা, সত্যবাদিতা হয়ে পড়ে গৌণ বিষয়। যে মানুষটি আদর্শের কথা বলে, প্রশ্ন তোলে, অন্যায়ের প্রতিবাদ করে—তাকে ‘অবাধ্য’, ‘বিরোধী’ কিংবা ‘ঝামেলাপ্রবণ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এভাবে দেশপ্রেমিক মানুষ ধীরে ধীরে রাজনীতির মূল স্রোত থেকে ছিটকে পড়ে।
ভালোমানুষের অবমূল্যায়ন আমাদের সমাজে প্রায় প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিয়েছে। সততা এখানে দুর্বলতা হিসেবে বিবেচিত হয়, নীরবতা ভীরুতা হিসেবে, আর ন্যায্যতার পক্ষে থাকা হয়ে ওঠে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। যারা নিয়ম মেনে চলে, অন্যায়কে ‘না’ বলে—তারা সুবিধা পায় না, বরং বঞ্চিত হয়। এই বাস্তবতা মানুষকে শেখায়, ভালোমানুষ হয়ে টিকে থাকা কঠিন। ফলে অনেকেই নিজের ভেতরের দেশপ্রেমকে চেপে রাখতে শেখে, বাঁচার স্বার্থে আপস করে।
এর সঙ্গে যোগ হয় ভয়ংকর এক নিরাপত্তাহীনতা। এদেশে দেশপ্রেমিক হওয়া মানেই সবসময় নিরাপদ থাকা নয়। কথা বললেই হুমকি, লিখলেই মামলা, পথে নামলেই হামলার আশঙ্কা—এই ভয়ের সংস্কৃতি মানুষকে নীরব হতে বাধ্য করে। পরিবার, জীবিকা, ভবিষ্যৎ—সবকিছুর দায় কাঁধে নিয়ে মানুষ ভাবে, “দেশপ্রেম দেখিয়ে লাভ কী, যদি নিজেই হারিয়ে যাই?” এই প্রশ্নের কোনো সহজ উত্তর নেই।
ফলে যা হয়, তা হলো ধীরে ধীরে আত্মরক্ষামূলক এক মানসিকতা তৈরি হয়। মানুষ দেশকে ভালোবাসে, কিন্তু প্রকাশ করতে ভয় পায়। অন্যায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার বদলে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখে। দেশপ্রেম তখন বুকের ভেতরে চাপা পড়ে থাকে—প্রকাশ পায় না কর্মে, কথায় বা রাজনীতিতে।
এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য প্রয়োজন ক্ষমতার রাজনীতির বদলে আদর্শের রাজনীতি, ভয়ের বদলে নিরাপত্তা, আর অবমূল্যায়নের বদলে সম্মান। যতদিন না একজন ভালোমানুষ নিরাপদে ভালো থাকার নিশ্চয়তা পায়, ততদিন এই দেশে দেশপ্রেমিক মানুষের সংখ্যা বাড়বে না—বরং জন্ম নিয়েও তারা ধীরে ধীরে দেশপ্রেমিক হওয়া থেকে সরে আসবে।
আর সেটাই হবে রাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় ভয়ংকর রকমের ক্ষতির কারন যা জাতিকে ধীরে ধীরে অন্ধকারে নিমজ্জিত করে ফেলবে।
আল আমিন মিলু
রাজনৈতিক বিশ্লেষক গবেষক ও
আহ্বায়ক গনঅধিকার পরিষদ
সরিষাবাড়ি উপজেলা শাখা জামালপুর