নিজস্ব প্রতিবেদক
তাই তো প্রশ্ন জাগে—এই দেশে দেশপ্রেমিক তৈরি হয় না কেন? কেন হাদী, নুরদের মতো কণ্ঠগুলো বারবার হুমকির মুখে পড়ে, কেন তারা এই দেশে বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা পায় না? এর উত্তর খুব কঠিন নয়, বরং ভয়ংকরভাবে সরল—কারণ এই দেশে প্রকৃত দেশপ্রেমিকদের বেঁচে থাকার অধিকার ক্রমশ সংকুচিত করে ফেলা হয়েছে।
এই রাষ্ট্রব্যবস্থায় দেশপ্রেম আর ক্ষমতাপ্রীতির মধ্যে পার্থক্য করা হয় না। যে ক্ষমতার অন্যায় প্রশ্ন করে, তাকেই রাষ্ট্রদ্রোহী বানানো হয়। যে ন্যায্যতার কথা বলে, তাকে অস্থিতিশীলতার প্রতীক বলা হয়। ফলে দেশপ্রেম মানে হয়ে দাঁড়ায় শাসকের প্রশংসা, আর সত্য বলা মানে হয়ে যায় অপরাধ।
হাদী, নুররা কোনো বিদেশি এজেন্ডার প্রতিনিধি নয়, তারা এ দেশেরই সন্তান। তারা প্রশ্ন তোলে, কারণ তারা চায় রাষ্ট্রটা ঠিক পথে চলুক। কিন্তু সমস্যা হলো—এই দেশে প্রশ্ন করার সংস্কৃতি নেই, আছে শুধু আনুগত্যের চর্চা। যারা মাথা নোয়ায় না, তাদের জন্য এখানে নিরাপত্তা নেই।
আরেকটি বড় কারণ হলো—এখানে দেশপ্রেমকে দলীয় চশমা দিয়ে দেখা হয়। যে দলের বাইরে দাঁড়িয়ে দেশকে ভালোবাসে, তার দেশপ্রেমকে সন্দেহের চোখে দেখা হয়। ফলে দেশপ্রেমিক নয়, বরং দলপ্রেমিক তৈরির কারখানায় পরিণত হয়েছে রাজনীতি।
সবচেয়ে ভয়াবহ বিষয় হলো—নীরব সমাজ। যখন একজন দেশপ্রেমিক হুমকি পায়, তখন সমাজ বড়জোর দু’দিন সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট দেয়, তারপর সব ভুলে যায়। এই নীরবতাই অন্যায়ের সবচেয়ে বড় শক্তি। রাষ্ট্র তখন বুঝে যায়—সে যা খুশি করতে পারে, প্রশ্ন করার মতো কেউ নেই।
ফলাফল কী? দেশপ্রেমিকরা হয় নির্বাসনে যায়, নয়তো নিঃশব্দে হারিয়ে যায়, আর যারা থাকে—তারা ভয় নিয়ে বাঁচে। এই ভয়ই নতুন প্রজন্মকে শেখায়, দেশপ্রেম ঝুঁকিপূর্ণ, চুপ থাকাই নিরাপদ।
যেদিন এই দেশে দেশকে ভালোবাসা মানে ক্ষমতার প্রশ্ন করা বৈধ হবে, সেদিনই দেশপ্রেমিক তৈরি হবে। তার আগে নয়। কারণ যেখানে সত্য বলার মূল্য জীবন দিয়ে দিতে হয়, সেখানে দেশপ্রেম বিলাসিতা নয়—একটি সাহসী অপরাধ।
আল আমিন মিলু আহ্বায়ক গনঅধিকার পরিষদ সরিষাবাড়ি উপজেলা জামালপুর