
প্রদীপ চন্দ্র মম
এই রাষ্ট্র হঠাৎ জন্ম নেয়নি—
এটি গড়ে উঠেছে
বায়ান্নর রক্তাক্ত উচ্চারণে,
ঊনসত্তরের জ্বলন্ত রাজপথে,
একাত্তরের নয় মাস দীর্ঘ
গর্ভবেদনায়।
যারা সে সময় দেখেনি,
যাদের পিতৃপুরুষও দেখেনি—
আজ তারাই ইতিহাসের নামে
মিথ্যার পাঠশালা খুলে বসেছে,
সত্যকে বন্দি করে
অস্বীকারকে উত্তরাধিকার বানিয়েছে।
যারা চায়নি একটি ভাষা,
একটি পতাকা,
একটি মানচিত্র—
আজ তারাই রাষ্ট্র চালানোর স্বপ্ন দেখে।
পবিত্র গ্রন্থের আয়াত বিকৃত করে
ক্ষমতার সিঁড়ি বানায়,
সরল মানুষের বিশ্বাসে
বারুদের আগুন ধরায়।
রাজাকার, আলবদর, আলশামস—
এই নামগুলো কেবল অতীত নয়,
এরা আজও হাঁটে
নতুন পোশাকে,
নতুন মুখোশে,
নতুন প্রজন্মের ঘাড়ে চড়ে
পুরোনো অপরাধ বহন করে।
সাড়ে সাত কোটি বাঙালি
বুক পেতে দিয়েছিল
ইতিহাসের সামনে—
মা হারিয়েছিল সন্তান,
বোন হারিয়েছিল সম্ভ্রম,
স্বপ্ন মিশেছিল মাটির রক্তে—
শুধু একটি নাম লেখার জন্য
বিশ্বের মানচিত্রে: বাংলাদেশ।
বঙ্গবন্ধু ডাক দিয়েছিলেন—
আর বাঙালি ঝাঁপিয়ে পড়েছিল আগুনে,
কারণ স্বাধীনতা কোনো দান নয়,
এটি ছিনিয়ে নিতে হয় রক্তে।
তবু বিজয়ের পর
মহানুভবতার নামে
ক্ষমা পেয়েছিল খুনিরা—
আর আজ সেই ক্ষমাকেই
দুর্বলতা ভেবে
ফিরে এসেছে তারা।
যারা বিজয় দিবস মানে না,
তাদের ঘরের দেয়ালে ইতিহাস নেই—
ঝুলে আছে শুধু
উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া অস্বীকার।
রক্ত কখনো রক্তের সাথে
বিশ্বাসঘাতকতা করে না,
কিন্তু বিকৃত চিন্তা
রক্তকেও অস্বীকার করতে শেখায়।
নতুন প্রজন্ম, শোনো—
তুমি যে ভাষায় কথা বলছো,
সে ভাষা কেনা হয়নি বাজারে,
লক্ষ প্রাণের দামে
এটি ছিনিয়ে আনা হয়েছিল।
দেশপ্রেম মানে
অন্ধ আনুগত্য নয়,
দেশপ্রেম মানে
ইতিহাস জানা,
সত্যের পাশে দাঁড়ানো।
মসনদ চিরস্থায়ী নয়—
আজ যারা ক্ষমতায়,
কাল তারা দাঁড়াবে
ইতিহাসের কাঠগড়ায়।
ভেবে দেখো,
দেশ বিক্রির আগেই মনে রেখো—
তুমিও যে
এই মাটির সন্তান।
আমি একা হলেও বলছি—
দেশবিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে
আমার প্রতিবাদ থামবে না।
কারণ এই রাষ্ট্র
ভুলে যাওয়ার জন্য জন্মায়নি—
রক্ষা করার জন্যই
এর জন্ম হয়েছিল।
১৬/১২/২০২৫ খ্রিঃ।