
নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশের নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ভয়াবহ সংস্কৃতি বহুদিন ধরেই শিকড় গেড়ে বসেছে—নির্বাচন মানেই কোটি কোটি টাকা ছড়ানো। যেন এটাই স্বাভাবিক, এটাই নিয়ম! ক্ষমতায় যাওয়ার প্রতিযোগিতা যতটা না আদর্শ, নীতি ও জনস্বার্থের ভিত্তিতে হওয়া উচিত, তার চেয়ে বেশি হয়েছে অর্থের প্রদর্শনী, প্রভাব বিস্তার আর টাকার বিনিময়ে ভোট কেনাবেচার খেলায়। এই পথ থেকে রাষ্ট্রকে সরিয়ে আনতে না পারলে গণতন্ত্র কখনোই সুস্থভাবে দাঁড়াতে পারবে না।
টাকা ছড়ানোর নির্বাচনী সংস্কৃতি কোথা থেকে এলো?
আমাদের রাজনীতিতে একটি ভুল ধারণা শক্তভাবে প্রতিষ্ঠিত—নির্বাচনে জিততে হলে প্রচুর টাকা খরচ করতেই হবে। পোস্টার, মিটিং-মিছিল, পরিবহন, ভোটার ম্যানেজমেন্ট—এসবকে অজুহাত করে কোটি কোটি টাকা খরচ করা হয়। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এই “খরচ” আসলে বিনিয়োগ, যার ফেরত পরে জনগণের কাঁধেই চড়ে আসে—দুর্নীতি, কমিশন, লুটপাট, টেন্ডারবাজি আর ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে।
যিনি কোটি টাকা খরচ করে ভোট কিনে আসেন, তিনি জনগণের নয়—নিজের খরচ উঠানোর জন্য কাজ করেন। আর এখানেই গণতন্ত্র মৃত্যুর ঘন্টা বাজে।
জনগণ কেন এই ফাঁদে পড়ে?
কারণ রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় আস্থার সংকট। অনেক ভোটার ভাবেন, “যাই হোক, কেউ তো আসলেই আমাদের জন্য কাজ করেন না—যে টাকা দিচ্ছে, সেটা এখনই নিয়ে নিই।”
এই মনোভাবকে ব্যবহার করে অনেক প্রার্থী টাকার বস্তা খুলে দেন, রাতারাতি এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে যায় নোটের বান্ডিল, আর বিবেক কোথাও হারিয়ে যায়।
এই সংস্কৃতি কেন বিপজ্জনক?
১. দুর্নীতিকে বৈধতা দেয়
নির্বাচনে টাকা ঢালার মানে হলো পরবর্তী পাঁচ বছর দুর্নীতির চক্রকে বৈধতা দেওয়া।
২. যোগ্য নেতৃত্বকে দূরে সরায়
যিনি জনস্বার্থে কাজ করতে চান কিন্তু হাতে কোটি টাকা নেই—তিনি নির্বাচনই করতে পারেন না।
৩. রাষ্ট্রের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়
টাকার বিনিময়ে নির্বাচিত নেতা কখনোই উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দেন না।
৪. সমাজে বৈষম্য বাড়ে
রাজনীতি ধনী ও প্রভাবশালীদের খেলায় পরিণত হয়—গরিব মানুষের প্রতিনিধিত্ব কমে যায়।
এই দুষ্টচক্র ভাঙতে কী প্রয়োজন?
১. নির্বাচন কমিশনের কঠোর নজরদারি
তফসিল ঘোষণার পর প্রার্থীদের অর্থের উৎস যাচাই বাধ্যতামূলক করতে হবে।
২. ব্যয়ের সীমা কঠোরভাবে প্রয়োগ
নির্বাচনী ব্যয়ের হিসাব না দিলে প্রার্থিতা বাতিল—কাগজে নয়, বাস্তবে প্রয়োগ করতে হবে।
৩. ভোটারদের সচেতনতা
ভোটের সময় টাকা হলেই তা গ্রহণ নয়, বরং জানান দিতে হবে—এটা অপরাধ।
৪. পার্টি ফান্ডিংয়ে স্বচ্ছতা
দলগুলোর জবাবদিহিমূলক অর্থনীতি প্রয়োজন।
৫. আদর্শিক রাজনীতি শক্তিশালী করা
যখন জনগণ নীতি-নৈতিকতার ভিত্তিতে ভোট দিতে শিখবে, তখন টাকা ছড়িয়েও কেউ ভোট কিনতে পারবে না।
শেষকথা
নির্বাচন হলো জনগণের সরল ইচ্ছার প্রতিফলন—টাকার বস্তায় সাজানো বাজার নয়। কোটি কোটি টাকা দিয়ে কেনা ক্ষমতা জনগণের উন্নয়ন আনে না, আনে ভয়, দুর্নীতি ও অন্যায়।
এ সংস্কৃতি বন্ধ করতেই হবে—এটা শুধু রাজনৈতিক প্রশ্ন নয়, রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষার প্রশ্ন।
যেদিন আমরা ভোটকেন্দ্রে দাঁড়িয়ে বলব, “আমার ভোট বিক্রি নয়”—সেদিন সত্যিকারের পরিবর্তন শুরু হবে।
আল আমিন মিলু
আহ্বায়ক
গনঅধিকার পরিষদ
সরিষাবাড়ি উপজেলা শাখা জামালপুর