
প্রদীপ চন্দ্র মম
এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম,
এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম—
এই বাক্য দিয়ে আমরা
রক্তকে গানের মতো গেয়েছি,
মৃত্যুকে পতাকার মতো ওড়িয়েছি।
রাস্তায় রাস্তায় আগুন হেঁটেছে,
মানুষ বুক পেতে দিয়েছে ইতিহাসের সামনে—
মানচিত্র লিখেছি রক্তে,
বিজয় সাজিয়েছি লাশে,
স্বাধীন হয়েছি—
কিন্তু মুক্তি?
মুক্তি আজও নিখোঁজ!
পতাকা উঠেছে আকাশে,
কিন্তু ক্ষুধা নামেনি পেট থেকে।
সংবিধান আছে—
ন্যায় গায়েব।
ভোট আছে—
কণ্ঠ রুদ্ধ।
রাষ্ট্র আছে—
মানুষ নেই!
স্বাধীন দেশের নাগরিক আজও
লাইনে দাঁড়িয়ে থাকে
বাঁচার অনুমতি নিতে।
অলিগলিতে স্বাধীনতা
এখন ভবঘুরে মেয়ে—
খালি পায়ে হেঁটে বেড়ায়,
ফুটপাথে ঘুমায়,
কারখানার ধোঁয়ায়
স্বপ্নের ফুসফুস পুড়ে যায়।
মাঠ আছে—
ফসলের হাসি নেই।
কলম আছে—
সত্যের সাহস নেই।
মসজিদ আছে—
ইনসাফ নেই।
আদালত আছে—
বিচার নেই।
সব আছে—
শুধু মানুষের দাম নেই!
আমরা শিখেছি পতাকা আঁকতে,
মানুষ আঁকতে পারিনি।
আমরা মুখস্থ করেছি
বীরের বয়ান,
কিন্তু ভুলে গেছি
ক্ষুধার ব্যাকরণ,
বেকারত্বের বানান,
নিঃস্বতার উচ্চারণ—
লিখতে হয় কীভাবে
রক্ত দিয়ে!
স্বাধীনতার সুখ কোথায়?
কার থালায়?
কার ঘরে?
কোন শ্রমিকের ঘামে
তার স্বাক্ষর আছে?
কোন কৃষকের চোখের জলে
তার সিল মারা আছে?
আমরা স্বাধীন হয়েছি কাগজে,
মুক্তি আসেনি পেটে।
গণতন্ত্র এসেছিল মিছিলে,
ফিরে গেছে শাসকের গাড়িতে চড়ে।
মানুষ শুধু ভোট দেয়—
ভাগ্য বদলাতে পারে না।
তবু শোনো—
এই ধ্বংসস্তূপের ভেতরেও
একজোড়া লাল-সবুজ আগুন জ্বলে!
হতাশার বুক চিরে
এখনো জন্ম নেয় প্রতিরোধ,
এখনো রক্ত চিনতে পারে
কোনটা শত্রু,
কোনটা মুক্তি।
কারণ এবার আবার
আরেকটি সংগ্রাম আসছে—
এইবার কেবল স্বাধীনতার নয়,
এইবার রুটির জন্য,
বিচারের জন্য,
মানুষ হয়ে ওঠার জন্য
মানুষের সংগ্রাম!
১০/১২/২০২৫ খ্রিঃ।