
নিজস্ব প্রতিবেদক
মানুষ মাত্রই ভুল করতে পারে—এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু যখন ভুলকে ন্যায়ের আসনে বসানো হয়, তখন সেই সমাজের রোগ অনেক গভীর। সমাজের সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি তখনই শুরু হয়, যখন মানুষের বিবেক পচে যেতে থাকে। বিবেক পচে গেলে মানুষ আর সত্য–মিথ্যার পার্থক্য বোঝে না; বরং নিজের স্বার্থ, নিজের ক্ষমতা, নিজের লোভকে ন্যায়ের ভাষায় প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করে। তখন অন্যায়ও হয়ে যায় ন্যায়ের নামে মহান কর্ম!
আজ আমাদের সমাজে ঠিক এই পচনটাই সবচেয়ে বেশি দৃশ্যমান। যারা জনগণের ক্ষতি করছে, যারা দুর্নীতি করছে, যারা ক্ষমতার অপব্যবহার করছে—তারা সবাই নিজেদের কাজকে ন্যায্য প্রমাণের জন্য হাজারো যুক্তি দাঁড় করাতে ব্যস্ত। কেউ বলে, “দেশের কল্যাণে করছি”; কেউ বলে, “পরিস্থিতি আমাকে বাধ্য করেছে”; আবার কেউ যুক্তি দেয়, “এটা তো সবাই করে!”
এ যেন সত্যের বিরুদ্ধে যুক্তির সশস্ত্র মিছিল।
এই পরিবর্তনের শুরু হয় ভেতর থেকেই—বিবেকের মৃত্যু থেকেই।
যখন একজন মানুষ নিজেকে প্রশ্ন করতে ভুলে যায়, ভুলকে ভুল বলতে ভয় পায়, তখনই সে নিজের ভিতরের মানবিকতাকে হত্যা করে। একসময় সেই মানুষটাই ক্ষমতা, লোভ ও স্বার্থের কাছে আত্মসমর্পণ করে অন্যায়কে ন্যায়ের মতো সাজিয়ে তুলতে থাকে।
অন্যায়কে ন্যায় বানানোর এই প্রবণতা শুধু একজন ব্যক্তিকে নয়—সমগ্র জাতিকে অন্ধকারে ঠেলে দেয়। কারণ অন্যায় যখন যুক্তির ভাষা পায়, তখন প্রকৃত ন্যায় নিস্তব্ধ হয়ে পড়ে। সত্যের কণ্ঠস্বর দুর্বল হয়, সমাজে নৈতিকতা মৃতপ্রায় হয়। বিচার ব্যবস্থা থেকে প্রশাসন—সবই আক্রান্ত হয় এই পচনে।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে—সমাধান কোথায়?
সমাধান একটাই: বিবেককে জাগ্রত করতে হবে।
যে সমাজে মানুষ নিজের ভুল স্বীকার করতে শেখে, যে সমাজে সত্য বলার সাহস থাকে, যে সমাজে নৈতিকতা লোভকে হারায়—সেই সমাজই পারে অন্যায়কে ন্যায়ের পোশাক পরিয়ে দেওয়া মানুষগুলোর মুখোশ খুলে দিতে।
অন্যায়কে ন্যায়ের মতো সাজিয়ে তোলার এই অসুস্থ সংস্কৃতি বন্ধ করতে হলে আমাদের নিজেদের থেকেই শুরু করতে হবে। প্রতিটি ব্যক্তির ভিতরে একটি ছোট আদালত আছে—বিবেকের আদালত। এই আদালতকে সক্রিয় রাখলেই সমাজের বড় আদালতগুলোও ন্যায়ের পথে থাকে।
যদি আমরা চাই একটি সৎ, ন্যায্য ও মানবিক বাংলাদেশ—তাহলে প্রথমেই বিবেকের এই পচন থামাতে হবে। কারণ বিবেকই মানুষের প্রকৃত সম্পদ; আর বিবেক পচে গেলে মানুষ মানুষ থাকে না, হয়ে যায় ক্ষমতার দাস, লোভের ক্রীতদাস।
অন্যায়কে ন্যায্য করে তোলার সংস্কৃতি যেদিন আমাদের সমাজ থেকে মুছে যাবে, সেদিনই সত্যিকার অর্থে ন্যায় প্রতিষ্ঠার সূর্য উঠবে।
আল আমিন মিলু
আহ্বায়ক
গনঅধিকার পরিষদ
সরিষাবাড়ি উপজেলা শাখা জামালপুর