
নিজস্ব প্রতিবেদক
মানুষ সামাজিক জীব—এটি শুধু সমাজবিজ্ঞানের একটি সংজ্ঞা নয়, বরং আমাদের সভ্যতার ভরকেন্দ্র। সমাজে টিকে থাকার জন্য মানুষ মানুষের পাশে দাঁড়ায়, বিপদে এগিয়ে আসে, অন্যের দুঃসময় ভাগ করে নেয়—এভাবেই মানবিকতা বিকশিত হয়। কিন্তু দুঃখজনক সত্য হলো, আজকের বাস্তবতায় উপকার করার মানুষের অভাব যতটা নয়, তার চেয়েও বড় সংকট হলো উপকারের মূল্যায়ন করতে পারে—এমন মানুষের অভাব।
অনেকেই অভিযোগ করেন, “এখন মানুষ বদলে গেছে, কেউ কাউকে সাহায্য করতে চায় না।” কিন্তু সত্যিটা হলো, মানুষ সাহায্য করতে চায়, সুযোগও পায়—কিন্তু অসংখ্য তিক্ত অভিজ্ঞতা তাদেরকে পিছিয়ে দেয়। কারণ এই সমাজে উপকার করলে অনেক সময়ই দু’টি বিপদের মুখোমুখি হতে হয়—
এক, উপকারের স্বীকৃতি পাওয়া যায় না।
দুই, স্বীকৃতি তো দূরের কথা, উপকারকারী পরেই অপমান, অবহেলা কিংবা বিশ্বাসঘাতকতাও সহ্য করতে হয়।
এমন বাস্তবতা মানুষকে ধীরে ধীরে স্বার্থপর করে তুলেছে।
মানুষ ভাবে—“যার জন্য করলাম সেই-ই ভুলে গেল, ভবিষ্যতে আবার অকৃতজ্ঞতার শিকার হতে হবে কেন?”
ঠিক এই ভয় মানুষের ভিতর থেকে মহত্ব, উদারতা আর মানবিকতার শক্তিকে ক্ষয়ে দিচ্ছে।
উপকার গ্রহণ করেও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করা শুধু ব্যক্তিগত ত্রুটি নয়—এটি একটি সামাজিক ব্যাধি। কৃতজ্ঞতার অভাব মানুষের চরিত্রকে খাটো করে এবং সমাজের পারস্পরিক সহমর্মিতাকে দুর্বল করে। যারা উপকার করে তারা চায় না স্লোগান, চায় না প্রচার; তারা শুধু চায় সামান্য একটুখানি সম্মান, একটি ধন্যবাদ, একটি মানবিক স্বীকৃতি।
কিন্তু সেটুকুও যখন পাওয়া যায় না, তখনই মানুষ নিজের দরজা বন্ধ করে দেয়।
অথচ একটি কৃতজ্ঞ “ধন্যবাদ” মানুষের মনকে বদলে দিতে পারে, বিপদের দিনে শত গুণ বেশি পাশে দাঁড়ানোর শক্তি দিতে পারে।
উপকারের প্রতিদান উপকার দিয়ে দিতে না পারলেও উপকারের সম্মান প্রতিটি মানুষেরই দেওয়া উচিত।
কারণ অন্যের উপকার স্বীকার করা মানে নিজের মানবিকতাকে বাঁচিয়ে রাখা।
সমাজকে যদি আরও মানবিক, আরও সহমর্মী করতে চাই—তাহলে শুধু উপকারীর সংখ্যা বাড়ালেই হবে না, বাড়াতে হবে উপকারের মূল্যায়ন করার মানুষও।
সেটাই হবে আমাদের নৈতিক উন্নতির প্রথম ধাপ।
যে সমাজ কৃতজ্ঞতা জানে, সে সমাজ কখনোই মানবিকতার সংকটে পড়ে না।
আর যে সমাজ উপকারীর মর্যাদা দেয় না—সে সমাজ ধীরে ধীরে নিজের মানবিক শিকড় হারিয়ে ফেলে।
আল আমিন মিলু
আহ্বায়ক
গনঅধিকার পরিষদ
সরিষাবাড়ি উপজেলা শাখা জামালপুর