
প্রদীপ চন্দ্র মম
এই শহরে এখন ঘড়ির কাঁটাও রক্তে হাঁটে—
ভোর হয় লাশের খবরে,
রাত নামে গুলির শব্দে।
প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ
হেঁটে যায় অচেনা অন্ধকারে,
তাদের নাম থাকে পুলিশি খাতায়,
মায়ের বুকে থাকে আজীবনের ক্ষত।
ঢাকার বুকে সবচেয়ে বেশি আর্তনাদ—
মিরপুর, মোহাম্মদপুর, পুরান ঢাকা—
সবাই যেন একেকটা খোলা কবর,
যেখানে জীবিত মানুষও প্রতিদিন
মৃত্যুর মহড়া দেয়।
কেউ খুন হয় রাজনীতির নামে,
কেউ মরে চাঁদার দাবিতে,
কেউ মাদক-অস্ত্রের বাজারে
সংখ্যা হয়ে পড়ে—
সংখ্যা বাড়ে,
কিন্তু কমে না রক্তের দাম।
হার্ডওয়্যার দোকানের মানুষটিও জানত না—
গুলির শব্দ এমন কাছ থেকে শোনা যায়,
হাসপাতালের সামনে দাঁড়ানো তরুণটিও জানত না—
মৃত্যু কখনো এত প্রকাশ্যে আসে।
মানুষ পিটিয়ে মারলেও চারদিকে থাকে শুধু নীরবতা,
পিটুনির চেয়েও শক্ত মেরে ফেলে
এই সমাজের অসাড় নির্লিপ্ততা।
রাজনীতি বলে— “এটি ক্ষমতার সংঘর্ষ।”
পুলিশ বলে— “এটি নির্বাচন বছরের স্বাভাবিক সহিংসতা।”
কিন্তু মা বলেন না কিছুই—
শুধু ছেলের ছবির সামনে বসে
প্রতিদিন নিজেকেই কবর দেন।
জুলাইতে লাশ বেশি,
জানুয়ারিতে একটু কম—
কিন্তু বারোটা মাসই তো
রক্তেরই ক্যালেন্ডার!
ঢাকা একা নয়—
চট্টগ্রাম কাঁদে,
রাজশাহী-খুলনাও কাঁদে,
রংপুর, ময়মনসিংহ, সিলেট, বরিশাল—
বাংলা মানেই এখন
একটি দীর্ঘ শোকবার্তা।
আইনের হাতে হাতকড়া আছে,
কিন্তু অনেক সময় তা পড়ে যায়
রাজনীতির পকেটে;
অপরাধী বদলায় দল,
বদলায় মুখ, বদলায় পতাকা—
কিন্তু বদলায় না তার বুলেট!
আমরা শুধু সংখ্যা গুনি,
শিরোনাম দেখি, স্ক্রল করি, ভুলে যাই—
যেন অগণিত লাশ
এখন শুধু প্রতিদিনের আবহাওয়া।
একদিন হয়তো শিরোনাম বদলাবে—
“প্রতিদিন খুন হচ্ছে ১১ জন” থেকে
“প্রতিদিন আমরা আরও নিথর হচ্ছি”—
তখন আর গুলি লাগবে না,
মানুষ মরবে শুধুই
ভয়ের অভ্যাসে,
নীরবতার মহড়ায়।
৩০/১১/২০২৫ খ্রিঃ।