
কামরুল হাসান: ‘
সবার বিচার কর তুমি, তোমার বিচার করবে কে?’ যখন কোন বিচারক নিজেই একর পর এক অবিচার বা অন্যায় করতে থাকে- ঠিক তখনই ভিন্ন ধারার অর্থাৎ এক অভিনব উপায়ে প্রতিবাদের কণ্ঠ গানের সুরে কানে বাজে। এমনি কতিপয় বিচ্ছিন্ন ঘটনা নিয়ে আজকের এ আয়োজন- জামালপুর সদর উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নের কৈডোলা হক দাখিল মাদ্রাসার সাবেক সুপার হাবিবুর রহমান (৭২) চাকুরীর সুবাদে ৬-৭ মাস ধরে ঢাকায় অবস্থান করছিলেন। গত ২৩ নভেম্বর ভোর ৬টার দিকে বাথরুমে গিয়ে স্ট্রোক করে উপুর হয়ে পড়ে মারা যান। পর দিন ২৪ নভেম্বর সকালে তাকে নিজ গ্রাম জামালপুর সদর উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নের বিয়ারায় জানাজা শেষে দাফন করা হয়। দাফন পরবর্তী তার বাড়িতে আল আমিন নামে এক পাওনাদার আসে। কিন্তু মৃতের ভাতিজা ছানু, আনিছ, জামাল ও ফজল মিলে ওই পাওনাদার ও তার মাকে মারধর করে। এক পর্যায়ে ওই পাওনাদারকে পাওনা টাকাতো দেয়ই নাই বরং জোরপূর্বক তার কাছ থেকে মৃতের নিকট কোন পাওনা নেই মর্মে সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেয়ে নেয় তারা। সেই সাথে ঋণের টাকার নিশ্চয়তার জন্য মৃতের স্বাক্ষর করা চেকও ফেরৎ নেয়। শুধু এতেই ক্ষান্ত হয় নি তারা। ওই পাওনাদারের মাকে বাড়ি পাঠিয়ে তার স্বাক্ষরিত একটি সাদা চেকও নিয়ে নেয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২৩ নভেম্বর দুপুরে একই উপজেলার দিগপাইত ইউনিয়নের ছোনটিয়া গ্রামের এক নুরানী ও হাফিজিয়া মাদ্রাসার হেফজ বিভাগের এক শিক্ষক ওই বিভাগেরই এক শিশু শিক্ষার্থীর সাথে আপত্তিকর কান্ড করে বসে। এ ঘটনা বাড়িতে গিয়ে জানালে অভিভাবকসহ এলাকাবাসী মাদ্রাসায় এসে ওই অভিযুক্ত শিক্ষককে আটকিয়ে রাখে। পরে বেদরদী গোছের দুয়েক জন কৌশলে তাকে পালিয়ে যাবার সুযোগ করে। ফলে সে পালিয়ে যায়। ওই শিক্ষকের বাড়ি শেরপুর। তার মোবাইল ফোন বন্ধ রয়েছে। এ সংবাদ পেয়ে ঘটনার দিন ও পরের দিন মাদ্রাসায় পুলিশও এসেছিল। ২৬ নভেম্বর সকালে ম্যানেজিং কমিটি, শিক্ষক, অভিভাবক ও স্থানীয় নেতাদের নিয়ে মাদ্রাসায় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সিদ্ধান্ত হয় যে- আগে যা হয়েছে, সব বাদ। এখন থেকে মাদ্রাসা চলবে। এজন্য সবাইকে সহযোগিতা করতে হবে। মাদ্রাসার তত্বাবধায়ক, মিলন প্রফেসর জানান, ঘটনার দিন দুপুরে ওই শিক্ষক গোসল করতে গেলে ভিকটিম হুজুরকে গোসলের কাজে খেদমত করে। এ বিষয়টিকে অভিভাবকসহ এলাকাবাসী ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করে। তবে সভায় অভিভাবকরা তাদের জবানবন্দীতে বলে-শিক্ষক ওই শিক্ষার্থীকে শাসন করে। শিক্ষার্থী বাড়ি এসে কান্না করলে অভিভাবকরা ক্ষেপে গিয়ে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করে। এখন থেকে তারা মাদ্রাসার কাজে পূর্ণ সহযোগিতা করবে। ভিকটিমের দাদা জানান, সভায় নেতারা বলে যে- আগে যা কিছু হয়েছে, সব কিছু বাদ। এখন থেকে মাদ্রাসা ঠিকভাবে চলবে। এজন্য সবাইকে সহযোগিতা করতে হবে।
২৪ নভেম্বর বিকেলে একই উপজেলার তিতপল্লা ইউনিয়নের শিমুলতলী এলাকার জহুরুল মেম্বারের ভাতিজা অটো চালক শাহিন এক যাত্রীর সাথে হুমকি দিয়ে বসে। স্থানীয়রা জানায়, সে এখন একটি রাজনৈতিক দলের ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতা। তাই সে দাপট দেখায়। অন্য এক প্রবীন ব্যক্তি জানান, এখন সে ৭১-এর সময়কার বলাই সেজেছে। ইউনিয়ন পর্যায়ের স্থানীয় এক শীর্ষ নেতা বলেন, সে একটা ফালতু ছেলে। ওই ধরনের আচরন করে সে অন্যায় করেছে। ওই যাত্রীর কোন দোষ নেই। সম্পূর্ণ দোষ তারই।
ওই দিন বিকেলে একই উপজেলার দিগপাইত ইউনিয়নের ছোনটিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ভোকেশনাল শাখার এক প্রশিক্ষন কাজের দেখা- শুনার জন্য (দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি) এডিপিইও হারুনুর রশিদ আসেন। ততক্ষনে একই ক্যাম্পাসে অবস্থিত ছোনটিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ছুটি দিয়ে স্টাফরা অফিসে অবস্থান করছিলেন। সোয়া ৪ টার আগেই ছুটি দিয়েছে ভেবে তিনি রাতে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে মোবাইলে জানান, পরদিন ছুটির পর সকল স্টাফই যেন সংশ্লিষ্ট টিইও’র নিকট উপস্থিত হয়ে এর লিখিত কারন দর্শান। সে অনুযায়ী সকলে যথা সময়ে সংশ্লিষ্ট টিইও’র নিকট উপস্থিত হন। সংশ্লিষ্ট টিইও সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আসলে স্যার জানেন না যে, এক শীফটের স্কুল সাড়ে ৩ টা পর্যন্ত চলে। দুই শীফটে স্কুল চলে সোয়া ৪ টা পর্যন্ত।
প্রিয় পাঠক, একবার ভাবুন তো। আসলে আমরা আছিটা কোথায়? অতএব, কিছুই করার নেই। তবে, আরেকটু ভেবে বলুন তো-আজকের বিষয়টা যথার্থ হয়েছে কি না?
কামরুল হাসান
০১৯১৪-৭৩৫৮৪২