
প্রদীপ চন্দ্র মম
শীত এলে প্রকৃতি যেন
নীরব কোনো ধূসর বস্ত্র পরিয়ে নেয় আপন শরীরে—
ধানের গন্ধ-লাগা উঠোনে
নারীরা তখন আগুনের মলিন আলোয়
দুধ-সুগন্ধি পিঠার ভাঁজে ভাঁজে
রচনা করে ছোট্ট এক শান্তির মহাকাব্য।
কনকনে হাওয়ায় থমকে থাকে
গ্রামের কাঁচা পথ;
শিশুরা শুকনো ডালের আগুনে
হাত-পা মেলে খুঁজে ফেরে উষ্ণতার ছায়া—
জবুথবু পশুপাখির চোখে
ঝরে পড়ে কুয়াশার দুধসাদা বিস্ময়ের রেশ।
তবু শীত তার মায়া নিয়ে আসে—
সরষে শাকের সবুজ গন্ধ,
মুলার হিম-সতেজ সকাল,
লাউপাতার শিরায় জমে থাকা
হেমন্তের শেষ নীরব নিশ্বাস—
সব মিলিয়ে পৃথিবী তখন
আরেকটু অচেনা, আরেকটু দূরের।
এই অলস শীত-বিকেলে
মাঠের ধারের তালগাছ বেয়ে
আলো নেমে আসে মৃদু;
দূর অন্ধকারে হারানো পাখির ডাক
বুকে তোলে এক গোপন অনুরণন—
জীবনানন্দের ঝরাপাতা-স্বপ্নের মতোই
পৃথিবী হয়ে ওঠে
আরও নিরিবিলি, আরও একা, আরও নিজের মতো।
এই শীতেই মানুষ খুঁজে পায়
ধূপছায়া রঙের দিন,
মাঠের বরফ-গন্ধ হাওয়া,
অচেনা নিস্তব্ধতার কোলে
নিজেকে নতুন করে চিনে নেওয়ার অবকাশ;
শীত যেন বলে যায়—
দুঃখসুখের ভিড়েও
মানুষের অন্তরে
একটি নরম আলো এখনো জ্বলে।
২৪/১১/২০২৫ খ্রিঃ।