
প্রদীপ চন্দ্র মম
মানিকগঞ্জের বিকেলে ধুলো উড়ে যায় আজও—
কিন্তু সেই ধুলোয় স্বপ্নের দীপ্তি নয়,
থাকে আতঙ্কের শীতল কম্পন;
পুকুরের জলে ভেসে ওঠে
রুদ্ধশ্বাস পালাগানের কাঁপা প্রতিধ্বনি।
যে ফকির-বাউলরা শত বছর ধরে
মানুষকে শোনায় ভালোবাসার ধর্ম,
যাদের কণ্ঠে ঈশ্বরের নীরব স্বর
মানুষের হৃদয়ে আলো জ্বেলে দেয়—
আজ তারাই তাড়া খায়
‘বিশ্বাসের রক্ষক’ নামধারী অমানুষদের হাতে।
হে বাউল, তোমার একতারার তার
যখন আকাশে এক ফালি আলো কাটে,
সেই আলোয় জন্ম নেয় মুক্ত আত্মার গান।
কিন্তু সেই গান অসহ্য মনে হয়
যাদের হৃদয় অন্ধ কূপে নিক্ষেপিত,
যারা ভুলে গেছে—
ধর্ম মানুষের জন্য, মানুষের বিরুদ্ধে নয়;
ভালোবাসাহীন ধর্ম
শুধুই শূন্যতার আরেক নাম।
আজ আবুল সরকার কারাবন্দী—
ভক্তদের রক্ত ঝরে লাঠির আঘাতে,
কেউ কেউ প্রাণ বাঁচাতে
ঝাঁপ দেয় আতঙ্কের পুকুরে।
এ কি সেই দেশ,
যেখানে সুর অপরাধ আর নীরবতা নিরাপত্তা?
এ কি সেই ভূখণ্ড,
যেখানে শান্তির সুর বাজলে
ঘৃণার করতাল ছাপিয়ে যায় মানবতা?
মাজার ভাঙে, কবর পুড়ে—
অন্ধকারের কোনো শক্তি
ধর্মের নামে ঘরে ঘরে আগুন জ্বালায়।
সুফিদের পথ ছিল উদারতার,
আর আমরা আজ হাঁটি
বিভাজনের ধারালো, অমানবিক পথে।
হে বাংলাদেশ,
তোমার ইতিহাসের ধুলোর নিচে
যে গান হাজার বছর ধরে বেঁচে আছে—
সে গান কাউকে আঘাত করে না;
সে শেখায় শুধু মানুষ হওয়া।
সেই কণ্ঠ রক্ষা করাই
এ মাটির প্রাণ রক্ষার প্রতিশ্রুতি।
যারা আজো বাউলের দাওয়াতী সুরে
হৃদয়ের গোপন দরজা খুলে দেয়,
তারা জানে—
মানুষকে ভালোবাসাই প্রকৃত ধর্ম,
মানুষকে আঘাত করাই
সবচেয়ে বড় অমানবিকতা।
এসো, আমরা বলি—
যে কণ্ঠকে রুখে দেওয়া হয়,
সেই কণ্ঠেই সত্যের আগুন জ্বলে।
মানুষকে বাঁচানোই ধর্ম,
ঘৃণাকে থামানোই প্রকৃত দেশপ্রেম।
আবুল সরকারের মুক্তি—
একজন শিল্পীর মুক্তি নয়,
এ আমাদের বিবেকের মুক্তি;
এই অন্ধকার সময় থেকে
মানুষের দিকে ফেরার আলোকপথ।
দূর হোক সব ঘৃণা,
জেগে উঠুক সহমর্মিতা—
বাউলের কণ্ঠে আবার
বাংলাদেশ খুঁজে পাক
তার উদার, সত্য, মানবিক আত্মা।
২২/১১/২০২৫ খ্রিঃ।