
নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আজ সবচেয়ে আলোচিত প্রশ্ন— আগামীর প্রধানমন্ত্রী কে? এই প্রশ্ন শুধু রাজনৈতিক অঙ্গনে নয়, সাধারণ মানুষের আড্ডা, চায়ের দোকান, সোশ্যাল মিডিয়া—সবখানেই ঘুরে ফিরে আসছে। কেন এই প্রশ্ন? এর উত্তরের বিশ্লেষণই হচ্ছে আজকের আলোচ্য।
—
১️⃣ পুরোনো ব্যবস্থার পতনের পর উদ্ভূত শূন্যতা
যখন একটি দীর্ঘমেয়াদি শাসন শেষ হয় বা ভেঙে পড়ে, স্বাভাবিকভাবেই একটি নেতৃত্বশূন্য পরিবেশ তৈরি হয়। সেই শূন্যতাকে পূরণ করতে নতুন নেতৃত্ব উঠে আসে কিংবা বিদ্যমান নেতৃত্বের মধ্যেই প্রতিযোগিতা তীব্র হয়। এই মুহূর্তে বাংলাদেশ ঠিক সেই সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে।
—
২️⃣ জনগণ ‘ব্যক্তিতে’ নয়, ‘নীতি ও চরিত্রে’ প্রাধান্য দিতে শুরু করেছে
আগে নেতৃত্বের ক্ষেত্রে জনপ্রিয়তা বা দলীয় বলই ছিল প্রধান নিয়ামক। কিন্তু সাম্প্রতিক রাজনৈতিক জাগরণ দেখিয়েছে— জনগণ এখন প্রশ্ন করছে:
নেতার চরিত্র কেমন?
তিনি কি ক্ষমতার জন্য আপস করবেন, নাকি নীতির পক্ষে দাঁড়াবেন?
জনগণের অধিকার রক্ষা করবেন, নাকি দলের স্বার্থকে প্রাধান্য দেবেন?
জনমানসে এই পরিবর্তনই আগামী প্রধানমন্ত্রী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ফ্যাক্টর।
—
৩️⃣ তরুণ প্রজন্মের উত্থান
আজকের তরুণরা দলীয় আনুগত্যের বাইরে গিয়ে একজন নেতার ব্যাকগ্রাউন্ড, চিন্তাশক্তি, আন্তর্জাতিক জ্ঞান, দুর্নীতির প্রতি অবস্থান—এসব বিচার করছে।
তাদের কাছে ‘চেনা মুখ’ নয়, বরং যোগ্য মুখ বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ফলে আগামী প্রধানমন্ত্রী হতে হলে যে কারও:
পরিষ্কার রাজনৈতিক দর্শন থাকতে হবে
দেশের অর্থনীতি সম্পর্কে গভীর ধারণা থাকতে হবে
নৈতিক অঙ্গীকার স্পষ্ট হতে হবে
রাষ্ট্র পরিচালনায় আধুনিক চিন্তা থাকতে হবে
—
৪️⃣ রাজনীতির মেরুকরণ ভাঙছে
বাংলাদেশ দীর্ঘদিন দুই প্রধান দলের রাজনীতিতে আটকে ছিল। কিন্তু এখন মানুষ তৃতীয় শক্তির কথা ভাবছে, নতুন রাজনৈতিক ধারার প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে।
এই প্রেক্ষাপটে এমন একজন নেতা সামনে আসতে পারেন যিনি কোনও ঐতিহ্যিক ক্ষমতাকেন্দ্রের অংশ নয়, বরং জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে উঠে আসবেন।
—
৫️⃣ আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটও এখন গুরুত্বপূর্ণ
একজন সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রীকে শুধু দেশের ভেতরের রাজনীতি নয়, আন্তর্জাতিক কূটনীতি, বাণিজ্য, ভূরাজনীতি—সব বুঝে চলতে হবে।
বিশ্ব এখন ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল থেকে শুরু করে বৈশ্বিক অর্থনীতির সংকটে তুমুল পরিবর্তনের মধ্যে। বাংলাদেশের পরবর্তী নেতা এসব সামলাতে সক্ষম কিনা—এটাও বড় প্রশ্ন।
—
৬️⃣ কে হবেন?
এ প্রশ্নের সরাসরি উত্তর এখনো কেউ দিতে পারছে না—এটাই বাস্তবতা।
তবে নিশ্চিত যে আগামী প্রধানমন্ত্রী হবেন সেই ব্যক্তি:
যিনি জনগণের আস্থা অর্জন করবেন,
যিনি ন্যায়বিচারের প্রতি আপসহীন থাকবেন,
যিনি দেশকে অস্থিতিশীলতা থেকে বের করে ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যেতে পারবেন।
আগামী প্রধানমন্ত্রীর লড়াই আসলে দুই-চারজন ব্যক্তির মধ্যে নয়—এটা নীতি, আদর্শ, চরিত্র এবং জনআস্থার লড়াই।
—
শেষ কথা
জনগণ আর ‘কেউ মাথায় বসলেই চলবে’ মানসিকতায় নেই। দেশ একটি নতুন রাজনৈতিক অধ্যায়ের সামনে দাঁড়িয়ে, যেখানে নেতৃত্ব এক নতুন সংজ্ঞা পেতে চলেছে।
তাই প্রশ্নটা শুধু—আগামীর প্রধানমন্ত্রী কে?
না, প্রশ্নটা এখন আরও বড়—
আগামীর প্রধানমন্ত্রী কি সত্যিকারের জনগণের নেতা হবেন?
আল আমিন মিলু
আহ্বায়ক
গনঅধিকার পরিষদ
সরিষাবাড়ি উপজেলা শাখা জামালপুর