নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশের রাষ্ট্র কাঠামো, রাজনীতি ও গণতন্ত্রের পথচলার প্রতিটি বাঁকে সংবিধান ছিলো একদিকে পথনির্দেশক, অন্যদিকে লড়াইয়ের কেন্দ্রবিন্দু। কিন্তু একটা সত্য দীর্ঘদিন ধরেই স্পষ্ট—সংবিধান শুধু একটা আইনগত দলিল নয়; এটা একটি রাজনৈতিক দলীল। আর রাজনৈতিক দলীল হিসেবে সময়, সমাজ, রাষ্ট্রের চাহিদা ও বিশ্ব বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে এটিকে সংস্কার করা সময়ের দাবি—বরং বিপ্লবেরই দাবি।
ফ্যাসিবাদ ঠেকাতে সংবিধানই প্রথম প্রতিরোধভাগ
আমাদের ইতিহাস দেখিয়েছে, যখন সংবিধানকে ক্ষমতার সিন্দুকে বন্দি করা হয়, যখন জনগণের আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত হয় না—তখনই ফ্যাসিবাদের জন্ম। যেকোনো ক্ষমতা যদি মনে করে সংবিধান তার ব্যক্তিগত কবচ, তাহলে সেখানেই গণতন্ত্রের মৃত্যু শুরু হয়।
একসময় শেখ হাসিনা নিজের হাতে যেসব কাঠামো বানিয়েছিলেন—ট্রাইব্যুনাল, কমিশন, বিশেষ আইন—শেষ পর্যন্ত তিনি নিজেই সেই কাঠামোর ফাঁদে পড়ে গেলেন। ইতিহাস এখানে নির্মম; ক্ষমতার ভাষা একদিন নিজের দিকেই ফিরিয়ে আনে।
আজ যারা সংবিধান সংস্কারে বাধা দিচ্ছেন, তারাও নিরাপদ নন
বর্তমান সময়েও আমরা একই দৃশ্য দেখছি। দেশে নতুন প্রজন্ম উঠছে, নতুন রাষ্ট্রচিন্তা গড়ে উঠছে, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির দাবি বাড়ছে। তবুও কিছু রাজনৈতিক শক্তি সংবিধান সংস্কারের প্রশ্নে অকারণ ভীতি, জেদ, ও ক্ষমতার হিসাবনিকাশকে বড় করে দেখছে।
তারা ভাবছেন, আজ ক্ষমতায় শক্ত অবস্থান থাকলেই সব নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
কিন্তু ইতিহাস কখনোই কারো জন্য একমুখী রাস্তা রাখে না।
আজ যাঁরা সংস্কারের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছেন, কাল তাঁরাই সাংবিধানিক গ্যারাকলের শিকার হবেন।
কারণ সংবিধানের যে সংকট তারা ঠিক এখনই সমাধান করতে ব্যর্থ হচ্ছেন, ভবিষ্যতে সেই সংকটই তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে।
সংবিধান বদল মানে রাষ্ট্রধ্বংস নয়—রাষ্ট্রকে বাঁচানো
বিশ্বের সব দেশেই সংবিধান পরিবর্তন হয়।
এটা স্বাভাবিক, স্বতঃস্ফূর্ত, এমনকি অপরিহার্য।
আমাদের দেশে বরং সমস্যা হচ্ছে—সংবিধানকে ‘পবিত্র অশ্বত্থ গাছ’ বানিয়ে তার চারপাশে তর্কহীনতার প্রাচীর তৈরি করা। এর ফলে গণতন্ত্র সংকুচিত হয়, নতুন প্রজন্মের দৃষ্টিভঙ্গি উপেক্ষিত হয়, আর রাষ্ট্রযন্ত্র জীর্ণ হয়ে পড়ে।
তাই সংবিধান সংস্কার কোনো রাজনৈতিক দলের স্বার্থ নয়—এটা জাতীয় নিরাপত্তা, রাষ্ট্রীয় স্থিতি ও জনগণের অধিকার রক্ষার প্রশ্ন।
বদলে যাওয়া সময়ের সঙ্গে তাল মেলান, নয়তো সময়ই শাস্তি দেবে
আজ আমরা জুলাই বিপ্লবের পরবর্তী বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে আছি। জনগণ জেগেছে, রাষ্ট্রের কাঠামো নতুনভাবে ভাবার দাবি উঠে এসেছে, নতুন রাজনৈতিক ধারার জন্ম হয়েছে।
যদি এখনই সময়োপযোগী সাংবিধানিক সংস্কার না হয়, তাহলে—
ক্ষমতার অপব্যবহার আবারও ফিরে আসবে
বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে
প্রশাসন দলের বাহিনীতে পরিণত হবে
জনগণের ভোটাধিকার আবারও হুমকির মুখে পড়বে*
আর তখন যে সংকট তৈরি হবে, তা কোনো রাজনৈতিক দল সামলাতে পারবে না।
শেষ কথা
সংবিধানকে সময়োপযোগী করা মানে ক্ষমতা খর্ব করা নয়—ক্ষমতার বৈধতা নিশ্চিত করা।
সংবিধানকে গণমুখী করা মানে রাষ্ট্রকে শক্তিশালী করা।
এটা কোনো একটি দলের দাবি নয়—এটা জনগণের আদালতের দাবি, ইতিহাসের দাবি, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রতি দায়িত্ব।
আজ যারা এই সত্যটিকে অস্বীকার করছেন, তারা ভুলে যাচ্ছেন—
সাংবিধানিক গ্যারাকল কখনো কাউকে ছাড় দেয় না।
হাসিনা যেমন নিজের বানানো যন্ত্রেই আটকে গেছেন, তেমনি কাল অন্যরাও একই ভাগ্য এড়াতে পারবেন না।
চাই শুধু সাহস—সংস্কারের সাহস।
এটাই আগামী বাংলাদেশের পথচলার একমাত্র নিরাপদ রাস্তা।
আল আমিন মিলু
আহ্বায়ক
গনঅধিকার পরিষদ
সরিষাবাড়ি উপজেলা শাখা
জামালপুর