
নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি এমন এক পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে যেখানে ক্ষমতা মানেই যেন সর্বস্ব, আর ক্ষমতা হারানো মানেই শূন্যতার ভয়। অথচ প্রকৃত রাষ্ট্রনায়কের পরীক্ষাটা এখানেই—ক্ষমতার চূড়ায় নয়, ক্ষমতা থেকে সরে যাওয়ার পরেও তিনি কী রেখে গেলেন দেশের জন্য, মানুষের জন্য, ইতিহাসের পাতায়।
আমরা যারা রাজনীতি করি বা রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত, আমাদের একটা বড় সমস্যা হলো আমরা বর্তমান নিয়েই ব্যস্ত। আজকে পদ আছে, ক্ষমতা আছে, প্রশাসনের সব দরজা খোলা—এই অবস্থায় সিদ্ধান্ত নেওয়া খুব সহজ। কিন্তু প্রশ্ন হলো, একদিন যখন আর কিছুই থাকবে না, তখন মানুষ আমাদের কোন চোখে দেখবে? এই প্রশ্নটা যতদিন রাজনীতিবিদরা নিজেদের কাছে তুলবেন না, ততদিন ত্যাগ, আত্মসমালোচনা, সততা—সবই থাকবে কাগজে-কলমে।
রাজনীতির গণতান্ত্রিক রূপটিই হলো ক্ষমতা পাওয়া আর হারানোর মধ্যকার স্বাভাবিক প্রবাহকে মেনে নেওয়া। কিন্তু এখনকার বাস্তবতা উল্টো—ক্ষমতা হারানোর ভয়ই মানুষকে দুর্নীতি, দমন-পীড়ন, ক্ষমতার অপব্যবহার, আর জনবিচ্ছিন্নতার দিকে ঠেলে দেয়।
যদি নেতারা ভাবতেন,
“ক্ষমতা নেই তবুও যেন জনগণ সাথে থাকে”—
তাহলে অনেক কিছুই বদলে যেত।
ক্ষমতা থেকে সরে যাওয়ার পরে কী হবে—এই দুশ্চিন্তা থেকেই বড় নেতারা কখনও জনগণের পাশে দাঁড়াতে ভয় পান না। কারণ তারা জানেন, মানুষের ভালোবাসা ক্ষমতার চেয়েও বড় শক্তি। ইতিহাসের পাতায় যারা অমর হয়েছেন, তারা ক্ষমতার চেয়েও মূল্য দিয়েছেন নীতি ও ত্যাগকে।
আজ আমাদের রাজনীতিতে সেই চর্চা ফিরে আসা জরুরি। ক্ষমতা থাকলে সবাই আপন হয়, কিন্তু ক্ষমতা হারালে যারা পাশে থাকে, তারাই প্রকৃত রাজনৈতিক শক্তি। আর সেই শক্তি গড়ে ওঠে সততা, সঠিক সিদ্ধান্ত, মানুষের পাশে থাকা আর ন্যায়ের প্রতি অবস্থান নিয়ে।
সুতরাং যারা রাজনীতিতে আছেন—আজ থেকেই একটু ভাবুন,
“আমি যদি আগামীকাল পদে না থাকি, তবে মানুষ আমাকে কীভাবে স্মরণ করবে?”
এই প্রশ্নের উত্তরে যদি লজ্জা লাগে, তাহলে বদলে যাওয়ার সময় এসেছে।
আর যদি উত্তরে গর্ব থাকে, তাহলে বুঝবেন—আপনি সত্যিই দেশকে কিছু দিতে পেরেছেন।
ক্ষমতার মোহ ক্ষণস্থায়ী, কিন্তু মানুষের ভালোবাসা—চিরস্থায়ী।
এই সত্য যে রাজনীতিবিদরা যত দ্রুত বুঝবেন, দেশ তত দ্রুত বদলাবে।
আল আমিন মিলু
আহ্বায়ক
গনঅধিকার পরিষদ
সরিষাবাড়ি উপজেলা শাখা