নিজস্ব আন্দোলনের 

জুলাই মাসে ঘটা সেই সংগ্রাম — যে সময়ে তরুণ-জনতার গর্জন এক গোটা জাতিকে জিজ্ঞাসা করেছিল, “আমরা কি ভয়ের কাছে সরে যাব?” — তা এখন ইতিহাস নয়, চেতনার নাম। ২০২৪ সালের কোটা আন্দোলন থেকে শুরু হয়ে যে বৃহৎ জনআন্দোলনে অসংখ্য মানুষের আত্মদান এবং দৃঢ়তার ফলশ্রুতিতে দেশের রাজনৈতিক মানচিত্র কাঁপে, সেটাই ছিল এক উদ্বুদ্ধবার্তা: ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী বা অসংবেদনশীল হলে জনগণই তাকে প্রশ্ন করতে জানে।

আর তাই এ সময়েই আমাদের সবচেয়ে বড় সতর্কবাণীটি হওয়া উচিত—ভয় এবং হুমকির কাছে নিজেদের অধিকার হারানো মানে ফের উঠবে স্বৈরাচারের শিখর। ভোট কেবল একটি কাগজ নয়; এটি আপনার মর্যাদা, আপনার ক্ষতিগ্রস্ত স্বার্থ, আপনার সন্তান-প্রজন্মের ভবিষ্যত রক্ষা করার অস্ত্র। কেউ যদি আপনাকে বোঝায় চুপ করে গুলোতে যেতে বা নির্দিষ্টভাবে ভোট দিতে — মনে রাখবেন, আপনার অনুপস্থিতিই তাদের চাহিদা পূরণ করবে। ইতিহাস বলছে, লোকেরা যদি তাদের অধিকার ছেড়ে দেয়, তখন শাসনব্যবস্থা সহজেই দোসর হয়ে যায়।

ভয়-ধমকি, অপমান, বাধা—এসব তো নতুন কিছু নয়। আন্দোলনের সময় নানান প্রতিবন্ধকতা দেখেছি; তথাপিও জনগণ রুখে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু এখন জিনিসটা আরও সরস: ক্ষমতায় থাকাকালীন যে কেউ ভোটের ফল পাল্টাতে চাইলে, সে কৌশলে জনগণের অংশগ্রহণ কমিয়ে দিতে চাইবে—ফলে সিদ্ধান্ত নেবে একটি সংক্ষিপ্ত দলই। আপনার এক দিন অনুপস্থিতি পুরো জাতির জন্য দীর্ঘদিনের অনুপস্থিতি হয়ে যেতে পারে। তাই ভোটকে ছোট করে দেখবেন না; তা অনুশোচনাহীন শক্তিকে ঘাতক করে।

কেউ বলবে — ভোটে কী বদল হবে? প্রশ্নটা ঠিক। তবে ইতিহাস দেখায়—জনগণের দায়িত্বশীল অংশগ্রহণ যখন দৃঢ় এবং সুসংগঠিত হয়, তখন সরকার-সংস্করণ আর নীতিমানে বদল আসে। আপনার ভোট কাকে দেবেন—এটা ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত; কিন্তু সেই সিদ্ধান্তে যদি আপনি ভয়কে মাথায় রাখেন বা বাধ্য হয়ে টকটকে নির্বাচনকে উপেক্ষা করেন, তাহলে শক্তির ভারসাম্য বদলে যেতে পারে, এবং স্বাধীনতা-উন্নয়ন—সবই অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে।

তাই করণীয় কি? কয়েকটি সরল কথা:

১) নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগ করুন — সার্বক্ষণিক নয়, শুধু নির্বাচনী দিনের একটি ছোট সময়ে আপনার নাগরিক কর্তব্য পালন করুন।
২) ভোটকেন্দ্রে নিয়ে যায় এমন কোনো প্রকার বাধা-অবরোধ দেখলে সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় পর্যায়ে সেই ঘটনা তুলে ধরুন; সংবাদমাধ্যম ও সমাজের দিকে নজর দিন।
৩) আপনার পরিবার, প্রতিবেশী, বন্ধুবান্ধবকে বলুন — কারোর ভয়ে বা লাঠির ছোঁয়ায় নিজের অধিকার হারাবেন না। সংগৃহীত অংশগ্রহণই শক্তি।
৪) ভোটের দিন সচেতন থাকুন: ভোট কেন্দ্র শান্তিপূর্ণ ও স্বচ্ছ রাখতে সবাইকে অনুরোধ জানান—ভীত করা সত্ত্বেও সাহস রেখে আসুন।

জুলাই বিপ্লব এদেশকে স্মরণ করিয়েছে—স্বাধীনতা খালি কথায় নয়, ত্যাগ আর অংশগ্রহণে গঠিত। আজ সেই শিক্ষাকে পরিণতিতে রূপ দিন: ভোটের মাধ্যমে আপনার দৃঢ় ‘হ্যাঁ’ বলুন গণতন্ত্রকে, আপনার ‘না’ বলুন নির্যাতন ও স্বৈরাচারের পথে ফিরে যাওয়া শক্তিকে। আপনার ভোটই ভবিষ্যতের সরকার গড়বে—তাই আজ ম্লান হবেন না, সম্মুখীন হবেন।
শেষ কথা: কোনো ভয়-কথা শুনলে তা গোপন করবেন না — জানাতে হবে, শেয়ার করতে হবে, একসাথে প্রতিরোধ করতে হবে। আপনার এক ভোট—আপনার অধিকার; সেটাই শেষ কথা।)

আল আমিন মিলু
আহ্বায়ক
গনঅধিকার পরিষদ
সরিষাবাড়ি উপজেলা শাখা