
নিজস্ব প্রতিবেদক: মোঃ জালাল উদ্দিন।
সরকারি ব্যাংকগুলোর সেবার মান উন্নয়ন, গ্রাহকবান্ধব ব্যাংকিং ও তরুণ প্রজন্মকে আর্থিকভাবে সচেতন করে তোলার লক্ষ্য নিয়ে সারা দেশে চলছে বিভিন্ন কর্মসূচি। সেই ধারাবাহিকতায় উৎসবমুখর পরিবেশে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে অনুষ্ঠিত হয়েছে “তারুণ্যের উৎসব ও গ্রাহক সেবাপক্ষ ২০২৫”।

রবিবার (০২ নভেম্বর ২০২৫) সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত শ্রীমঙ্গল জনতা ব্যাংক পিএলসি শাখায় আয়োজনটি অনুষ্ঠিত হয়। পরে জোহরের নামাজ ও লাঞ্চের বিরতি দেওয়া হয়। বিকেল সাড়ে তিনটা থেকে মাগরিব পর্যন্ত চলে মূল অনুষ্ঠান ও গ্রাহক সভা।
শ্রীমঙ্গলে জনতা ব্যাংক পিএলসি’র খেলাপি ঋণ আদায় মাস উপলক্ষে আয়োজিত গ্রাহক সভায় শাখার ব্যবস্থাপক মোঃ সালাহ উদ্দিন সভাপতিত্ব করেন। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জনতা ব্যাংক সিলেট বিভাগীয় অফিসের জেনারেল ম্যানেজার মোহাম্মদ রবিউল আলম। বিশেষ অতিথি ছিলেন সিলেট অফিসের এজিএম শুভাষীশ চক্রবর্তী, বিভাগীয় অফিসের প্রিন্সিপাল অফিসার রুহুল আলম, এবং মৌলভীবাজার এরিয়ার ডিজিএম মোঃ রফিকুল ইসলামসহ অন্যান্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা।

প্রধান অতিথি মোহাম্মদ রবিউল আলম গ্রাহকদের সঙ্গে সরাসরি মতবিনিময় করেন এবং খেলাপি ঋণ সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যা ও সমাধান নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, “ব্যাংকের লক্ষ্য গ্রাহকসেবার মান উন্নয়ন এবং ঋণ আদায়ের প্রক্রিয়াকে আরও স্বচ্ছ ও কার্যকর করা।”
বিশেষ অতিথি মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, “বর্তমান যুগ প্রযুক্তিনির্ভর, তাই ব্যাংকিং ব্যবস্থাকেও সময়োপযোগী করতে জনতা ব্যাংক ডিজিটাল রূপান্তরের পথে অগ্রসর হচ্ছে। ই-জনতা অ্যাপ, অনলাইন ব্যাংকিং, স্মার্ট অ্যাকাউন্ট, স্কুল ব্যাংকিং, ডিপোজিট পেনশন স্কিম ও দ্বিগুণ মুনাফা স্কিম এখন দেশের তরুণ গ্রাহকদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। এসব সেবার মাধ্যমে সহজে সঞ্চয়, লেনদেন ও বিনিয়োগ করা সম্ভব হচ্ছে।” তিনি উপস্থিত শিক্ষার্থী, তরুণ-তরুণী ও নতুন গ্রাহকদের উদ্দেশ্যে বলেন, “বর্তমান প্রজন্ম যদি সঞ্চয়ে সচেতন হয়, তাহলে দেশের অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হবে। ব্যাংকিং শুধু টাকার বিষয় নয়, এটি দায়িত্ব, সচেতনতা ও ভবিষ্যৎ গঠনের মাধ্যম।”
শ্রীমঙ্গল শাখার ব্যবস্থাপক মোঃ সালাহ উদ্দিন। তিনি বক্তব্যে বলেন, “জনতা ব্যাংক সবসময় গ্রাহকদের আস্থার জায়গায় থাকতে চায়। আমরা চাই প্রতিটি গ্রাহক যেন আমাদের সেবায় সন্তুষ্ট থাকেন এবং ব্যাংকের সাথে দীর্ঘমেয়াদে সম্পর্ক বজায় রাখেন। আমাদের ব্যাংকে এখন সব ধরনের আধুনিক সেবা চালু রয়েছে — যেমন অনলাইন লেনদেন, মোবাইল ব্যাংকিং, স্থায়ী আমানত, কৃষি ঋণ, বাণিজ্যিক ঋণ, শিক্ষা ঋণ ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ প্রণোদনা। আমরা চাই গ্রাহকরা ব্যাংকে শুধু টাকা জমা রাখবেন না, বরং সঠিক পরামর্শ ও সুযোগ নিয়ে নিজেদের ভবিষ্যৎ গড়বেন।”
ব্যবস্থাপক সালাহ উদ্দিন আরও বলেন, ব্যাংকের প্রতিটি কর্মকর্তা-কর্মচারী আন্তরিকতার সঙ্গে গ্রাহকসেবা প্রদান করছেন। তিনি তরুণ প্রজন্মকে ব্যাংকের সঞ্চয়ী হিসাব ও স্কুল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আর্থিকভাবে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি জানান, খেলাপি ঋণ আদায়ের কার্যক্রম নিয়ম ও নির্দেশনা অনুযায়ী যথাযথভাবে পরিপালন করা হচ্ছে। গ্রাহকদের সহযোগিতা এবং ব্যাংকের নিয়মিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে খেলাপি ঋণ কমানো সম্ভব হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়াও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী ও স্থানীয় তরুণ উদ্যোক্তারা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান শেষে তরুণদের মধ্যে ব্যাংকিং সচেতনতা ও সঞ্চয়ের গুরুত্ব বিষয়ে আলোচনা হয়।
বক্তারা বলেন, “আজকের তারুণ্যই আগামীর অর্থনৈতিক চালিকাশক্তি; তাই ব্যাংকিং ও সঞ্চয়ের মাধ্যমে নিজেদের ভবিষ্যৎ এবং দেশের অর্থনীতি গঠনে তরুণদের এগিয়ে আসতে হবে।”
সভায় উপস্থিত কর্মকর্তারা ঋণ আদায় প্রক্রিয়া, সময়মতো কিস্তি পরিশোধ এবং খেলাপি ঋণ কমানোর জন্য বিভিন্ন সহায়তা ও পরামর্শ প্রদান করেন। গ্রাহকরা এ ধরনের উদ্যোগকে প্রশংসা জানান এবং ব্যাংকের কার্যক্রমকে স্বচ্ছ ও দায়িত্বশীল হিসেবে আখ্যায়িত করেন। সভা শেষে তথ্য অনুযায়ী ১ লাখ ৬২ হাজার টাকা খেলাপি ঋণ আদায় করা হয়েছে, যা ব্যাংকের কার্যক্রমের স্বচ্ছতা ও কার্যকারিতা আরও প্রমাণ করছে।