নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে। কিন্তু এখনো আমরা প্রশ্ন করি— আমরা জাতি হিসেবে জাতে উঠবো কবে? অর্থাৎ, আমরা কবে এমন এক রাষ্ট্রে রূপান্তরিত হব যেখানে নাগরিকের অধিকার, ন্যায়বিচার, শিক্ষা, সততা ও দেশপ্রেমই হবে মূল ভিত্তি? এই প্রশ্ন আজও অমীমাংসিত রয়ে গেছে, কারণ আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি এখনো ব্যক্তিনির্ভর, গোষ্ঠীনির্ভর, আর ক্ষমতানির্ভর হয়ে আছে।
বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দেখা যায়, দলীয় রাজনীতি এখন ক্ষমতা দখলের প্রতিযোগিতায় পরিণত হয়েছে। জনগণ আর রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু নয়, বরং রাজনীতির জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। নির্বাচন মানেই যেন পূর্বনির্ধারিত নাটকের মঞ্চায়ন। বিরোধীদল আন্দোলনে নামলে রাষ্ট্রযন্ত্রের দমননীতি সক্রিয় হয়, আর ক্ষমতাসীনদের সমালোচনা করলেই তা “রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড” বলে আখ্যায়িত হয়।
এই প্রেক্ষাপটে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে যে হতাশা, সেটিই সবচেয়ে ভয়ংকর। তারা রাজনীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে—কারণ রাজনীতি এখন আর নীতি শেখায় না, শেখায় সুবিধা আদায়ের কৌশল। অথচ একটি জাতি জাতে ওঠে তখনই, যখন তার তরুণরা আদর্শ, ন্যায্যতা ও দেশপ্রেমকে রাজনীতির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে গ্রহণ করে।
আমাদের প্রশাসনও আজ রাজনৈতিক প্রভাবের বাইরে নয়। আইনের শাসন অনেক সময় দলীয় আনুগত্যের শাসনে পরিণত হয়। বিচার ব্যবস্থা, নিয়োগ, শিক্ষা—সব ক্ষেত্রেই দেখা যায়, মেধার চেয়ে পরিচয়ই বেশি মূল্যবান। এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে আমরা উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় নাম লিখালেও, নৈতিকভাবে আমরা উন্নত জাতিতে পরিণত হতে পারবো না।
তবে সবকিছুই হতাশার নয়। সমাজের গভীরে এখনো কিছু মানুষ আছে—যারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলে, সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়, এবং নতুন প্রজন্মকে জাগ্রত করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। এই সংখ্যাটি যতই বাড়বে, ততই আমাদের রাষ্ট্র আবার নীতিনিষ্ঠ পথে ফিরে আসবে।
আমরা জাতি হিসেবে জাতে উঠবো তখনই—
যখন ক্ষমতার চেয়ে ন্যায়ের মূল্য বেশি হবে,
যখন রাজনীতি হবে সেবার, লুটের নয়,
যখন নির্বাচন হবে জনগণের উৎসব, শাসকের খেলা নয়,
যখন তরুণরা ভোটের রাজনীতি নয়, চিন্তার রাজনীতি করবে।
সেই দিনই আমরা সত্যিকার অর্থে জাতে উঠবো—জাতি হিসেবে, মানুষ হিসেবে, আর বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে।
আল আমিন মিলু
আহ্বায়ক
গনঅধিকার পরিষদ
সরিষাবাড়ি উপজেলা শাখা
জামালপুর