কামরুল হাসান:
চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় রেফার্ড শব্দটির অর্থ কি? এ দ্বারা কি বুঝায়? এর সংশিষ্টতা কিসে বা কোথায়? আবার এভোয়েড শব্দটির অর্থ কি? এ দ্বারা কি বুঝায়? এর সংশ্লিষ্টতা কিসে বা কোথায়? আসলে কম বৃঝদার বলেই ও সব জানিনা। তাই পাঠক মহল, সচেতন মহল, সংশ্লিষ্ট দপ্তর-অধিদপ্তর ও বিভাগসহ প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিগণ একটু ভেবে বলবেন কি? রেফার্ড আর এভোয়েড এক কি না? সুতরাং, আজকের বিশেষ ঘটনার প্রেক্ষিতে তা রেফার্ড না কি এভোয়েড ছিল!
গত সোমবার দুপুরের একটি মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনার বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জামালপুর সদর উপজেলার দিগপাইত উপ-শহর থেকে সোমবার দুপুর ১২ টার দিকে একটি যাত্রীবাহী ব্যাটারী চালিত অটো রিক্সা জামালপুর শহরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ৭-৮ মিনিটের মধ্যে অটো রিক্সাটি ঢাকা-জামালপুর মহা সড়কের জামালপুর অর্থনৈতিক অঞ্চলের মূল ফটকের সামনে পৌঁছে। এ সময় বিপরীত দিক থেকে অর্থাৎ জামালপুর থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী একটি কভার্ডভ্যান (নাবিল গ্রæপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ট্রান্সপোর্ট, অশোক লিল্যান্ড-এর তৈরী. যার রেজি: নং ঢাকা মেট্রো-ট ১২-৩৪৭৬, চেচিস- এমবি১এ৩এইচএফসি৪আরইএমএন৩২০৪, ইঞ্জিন-আরএমইজেড৪০৬৭৪৭) অটো রিক্সাটিকে চাপা দিয়ে পালিয়ে যায়। অবশ্য জনতা ঘাতক ট্রাকটিকে দিগপাইত উপ-শহর এলাকায় আটক করলেও চালক ও হেলপার পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ জনতার সহযোগিতায় সেখান হতে নারায়নপুর তদন্ত করে নিয়ে যায়। ওই মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় রাশেদ (৩০) নামে এক যাত্রী ঘটনাস্থলেই মারা যায়। সে সরিষাবাড়ীর মহাদান ইউনিয়নের সানাকইর গ্রামের হায়দর আলীর ছেলে। তাকে পর দিন মঙ্গলবার সকালে দাফন করা হয়েছে। এ ছাড়া চালক ও যাত্রীসহ ৭ জন গুরুতর আহত হয়। আহতরা হলো- জেলার সরিষাবাড়ী উপজেলাধীন মহাদান উইউনিয়নের উচ্চগ্রামের শরিফ আহম্মদের স্ত্রী আরিফা আক্তার পলি (২৪) ও ছেলে আরশ (৬), জামালপুর সদর উপজেলার তিতপল্লা ইউনিয়নের নারায়নপুর গ্রামের ময়েজ আলীর ছেলে চাঁন মিয়া (৬০), চাঁন মিয়ার স্ত্রী সন্ধ্যা বেগম (৫০), শিলকুড়িয়া গ্রামের তয়েজ উদ্দিনের ছেলে (অটোচালক) জাহাঙ্গীর আলম (৩২) ও দিগপাইত উইনিয়নের দিগপাইত গ্রামের বাদশা মিয়ার মেয়ে ফারজানা আক্তার (২২) এবং টাঙ্গাইল জেলার ধনবাড়ী উপজেলার রূপশান্তি গ্রামের মেরিন আহমেদের স্ত্রী সুমাইয়া আক্তার সিঁথি (২২)। স্থানীয় ও পথচারীরা আহতদের তড়িঘড়ি স্থানীয় ও সদর হাসপাতালে পাঠায়। দু:খ জনক হলেও সত্য যে, পথচারীরা আহত আরিফা আক্তার পলি ও তার ছেলে আরশকে বাঁচাতে দিগপাইত উপ-শহরের দুবাই হসপিটাল বিডি-তে নিয়ে আসে। কিন্তু ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের নূন্যতম প্রাথমিক চিকিৎসা (স্বাস্থ সেবা) না দিয়ে গেইট থেকেই ফিরিয়ে দেয়। অথচ এ বিষয়ে ওই দিন বিকেলেই ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুল হক জানায়, তাদের অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। তারা বাঁচবে না। তাই তাদের জামালপুরে রেফার্ড করা হয়েছে। এখন স্বভাবতই নানা মহলে প্রশ্ন উঠেছে যে- চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় রেফার্ড বলতে কি বুঝায়? এতে রেফার্ড না এভোয়েড করা হয়েছে? পলি যথা সময়ে কাঙ্খিত ম্বাস্থ্যসেবা পেয়েছে কি? পেলে বাঁচার আশা ছিল কি? শিশু আরশ মারা গিয়েছে কি? একজন চিকিৎসকের ধর্ম কি? ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যই বা কি? মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে কি? বিনা সহযোগিতায় পলির মৃত্যুর জন্য ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পরোক্ষভাবে দায়ী কি না? এ বিষয়ে পাঠক মহল, সচেতন মহল, সংশ্লিষ্ট দপ্তর-অধিদপ্তর ও বিভাগসহ প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিগণ ভেবে দেখবেন কি? তবে আহতদের মধ্য থেকে ওই দিন রাত ৯টা নাগাদ আরিফা আক্তার পলি (২৪), চাঁন মিয়া (৬০), সুমাইয়া আক্তার সিঁথি (২২) ও জাহাঙ্গীর আলম (৩২) মারা যায়। অপর দিকে ফারজানা আক্তার (২২) ঢাকায় উন্নত চিকিৎসা নিয়ে মঙ্গলবার সকালে বাড়ি ফিরেছে। আরশ (৬) উন্নত চিকিৎসা শেষে মঙ্গলবারের মধ্যেই ঢাকা থেকে বাড়ি ফেরার কথা। আর সন্ধ্যা বেগম (৫০) আশঙ্কাজনক অবস্থায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। উল্লেখ্য, চাঁন মিয়া ও সন্ধ্যা বেগম সরিষাবাড়ী ডাক্তার দেখিয়ে বাড়ি ফিরছিল। ফারজানা আক্তার, সুমাইয়া আক্তার সিঁথি ও আরিফা আক্তার পলি পরীক্ষা দিতে জামালপুর শহরে যাইতেছিল। ছোট্ট আরশ মায়ের সাথে ছিল। আর রাশেদ ব্যক্তিগত কাজে জেলা শহরে যাচ্ছিল। (লেখক: মানবাধিকার কর্মী, সংগঠক, সাংবাদিক, কলাম ও ফিচার লেখক)
কামরুল হাসান
০১৯১৪-৭৩৫৮৪২