নিজস্ব প্রতিবেদক
একটি রাষ্ট্র তখনই ন্যায়ভিত্তিক হয়, যখন সেখানে বিচারব্যবস্থা নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য থাকে। আর এই বিশ্বাসের মূল স্তম্ভ হলো বিচারক। বিচার যদি সুষ্ঠু না হয়, মানুষ বিচারব্যবস্থা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। কিন্তু তার চেয়েও ভয়ংকর অবস্থা তখন সৃষ্টি হয়, যখন বিচারকের নিরপেক্ষতা ও সততা প্রশ্নবিদ্ধ হয়। কারণ, একজন বিচারকের সিদ্ধান্ত শুধু একজন মানুষের নয়—একটি সমাজ, একটি রাষ্ট্র ও একটি প্রজন্মের ভবিষ্যৎকে প্রভাবিত করে।
আমরা প্রায়ই দেখি, কোনো মামলায় রায় হয়, কিন্তু জনগণের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক থেমে থাকে না। কেউ বলে বিচার ঠিক হয়নি, কেউ বলে রাজনৈতিক প্রভাব আছে, কেউ বলে বিচারক পক্ষপাতদুষ্ট। প্রশ্ন হলো, কেন এমন সন্দেহ জন্ম নেয়? এর প্রধান কারণ বিচারব্যবস্থার অস্বচ্ছতা।
যখন বিচারপদ্ধতি গোপনীয়তার আড়ালে থেকে পরিচালিত হয়, যখন বিচারকের সিদ্ধান্তে জনগণ কোনো যুক্তি খুঁজে পায় না, তখনই আস্থা নষ্ট হয়।
বিচারব্যবস্থায় স্বচ্ছতা মানে শুধু মামলার রায় প্রকাশ নয়—বিচারকের দায়িত্ব, তার নৈতিক মানদণ্ড, এবং তার আচরণও জনগণের আস্থার আওতায় থাকা উচিত। কারণ একজন বিচারকের ব্যক্তিগত সততা তার পেশাগত সততার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। যে বিচারক নিজে স্বচ্ছ নন, তিনি কখনও সুষ্ঠু বিচার দিতে পারেন না।
আজকের বাস্তবতায় দেখা যায়, অনেক বিচারক রাজনৈতিক প্রভাব, সম্পদ ও ক্ষমতার প্রলোভনে পড়ে কখনো কখনো এমন রায় দেন যা ন্যায়বিচারের পরিপন্থী। আবার কেউ কেউ নির্দোষ ব্যক্তির শাস্তি দিয়ে আসল অপরাধীকে রক্ষা করেন। এ যেন ন্যায়ের পোশাক পরে অন্যায়ের সেবা করা। এমন অবস্থা চলতে থাকলে বিচারব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থা ধ্বংস হয়ে যাবে, আর রাষ্ট্র নামক কাঠামোটি ধীরে ধীরে ভেঙে পড়বে।
বিচারব্যবস্থা সংস্কার করতে হলে প্রথমেই নিশ্চিত করতে হবে বিচারকের জবাবদিহিতা। যেমন—বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাব দূর করা, তাদের সম্পদের হিসাব নিয়মিত প্রকাশ করা, এবং যেকোনো অনিয়মে দ্রুত শাস্তির ব্যবস্থা করা। বিচারপতি মানেই ক্ষমতার আসন নয়—বরং এটি একটি পবিত্র দায়িত্ব, যা জনগণের প্রতি ন্যায়বিচার প্রদানের অঙ্গীকার বহন করে।
অতএব, সুষ্ঠু বিচার শুধু আইনের ব্যাখ্যা নয়, এটি নৈতিকতারও বিষয়।
যে বিচারক নিজেকে ন্যায়বিচারের প্রতিমূর্তি হিসেবে গড়ে তুলতে পারবেন, সেই বিচারকই জাতিকে সত্যিকার অর্থে নিরাপদ বিচার দিতে পারবেন।
কারণ মনে রাখতে হবে—বিচার যেমন সুষ্ঠু হওয়া দরকার, তেমনি বিচারকদেরও স্বচ্ছ হওয়া জরুরি। বিচারকের সততা হারালে ন্যায়বিচারও অন্ধ হয়ে যায়।
চাই একটি এমন বিচারব্যবস্থা, যেখানে বিচারক হবেন সাহসী, নিরপেক্ষ ও জনতার আস্থার প্রতীক—আর বিচার হবে সত্যের জয়ের উৎসব।
-আল আমিন মিলু
আহ্বায়ক
গনঅধিকার পরিষদ
সরিষাবাড়ি উপজেলা শাখা
জামালপুর