নিজস্ব প্রতিবেদক
দেশের প্রতিটি নির্বাচনের আগে একটাই কথা সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত হয়—“পরিবর্তন চাই।” কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, আমরা পরিবর্তনের কথা বললেও পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজনীয় বুদ্ধিবৃত্তিক প্রস্তুতি নিতে কখনোই আগ্রহ দেখাই না। ভোটের দিন যতই ঘনিয়ে আসে, ততই শুরু হয় প্রার্থীর ঢল, মঞ্চের প্রতিশ্রুতি, হাসিমুখে করমর্দন আর কৃত্রিম ভদ্রতা। অথচ এসবের পেছনে অনেক সময় লুকিয়ে থাকে অদৃশ্য স্বার্থ, ক্ষমতার দাপট আর দুর্নীতির ইতিহাস। তাই এখন সময় এসেছে, ভোট দেওয়ার আগে প্রার্থীকে চেনার, তার অতীত জানার, তার কাজের মূল্যায়ন করার।
রাজনীতিতে নেতৃত্ব শুধু জনপ্রিয়তার বিষয় নয়, এটা দায়িত্ব, ত্যাগ আর নৈতিকতার বিষয়। আপনার এলাকার সংসদ সদস্য মানেই তিনি শুধু এক ব্যক্তির প্রতিনিধি নন; তিনি শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, কর্মসংস্থান ও উন্নয়নের প্রতিটি খাতের পরিকল্পনায় ভূমিকা রাখেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে—যাকে আমরা ভোট দেব, তিনি কি আসলেই জনগণের প্রতিনিধি হওয়ার যোগ্যতা রাখেন? তিনি কি অতীতে জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছেন? কোনো দুর্নীতি, সন্ত্রাস, বা অনৈতিক কর্মকাণ্ডে তার নাম এসেছে কি না, সেটা কি আমরা যাচাই করেছি?
আমাদের দেশের রাজনীতিতে একটি বড় সমস্যা হলো—ব্যক্তিনির্ভর ভোট। আমরা প্রার্থীর গায়ে বড় দলের ট্যাগ দেখেই মুগ্ধ হয়ে যাই, কিন্তু দলনির্ভর রাজনীতি কখনোই উন্নয়নের নিশ্চয়তা দেয় না। একজন যোগ্য নেতা যদি ভালো দলেও না থাকে, তবু তার ব্যক্তিত্ব, নীতি ও সততা দিয়ে তিনি জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারেন। আবার একজন অযোগ্য ব্যক্তি বড় দলে থেকেও জনগণের ক্ষতি করতে পারে। তাই ভোটের আগে “কে কোন দলে” নয়, বরং “কে কেমন মানুষ”—এটাই হওয়া উচিত মূল প্রশ্ন।
একজন আদর্শ প্রার্থী কেমন হওয়া উচিত? প্রথমত, তিনি হতে হবে সৎ, স্বচ্ছ এবং নীতিনিষ্ঠ। দ্বিতীয়ত, তার মধ্যে থাকতে হবে জনসেবার মনোভাব। তৃতীয়ত, তার অতীত কর্মকাণ্ডে জনগণের উন্নয়নমূলক পদক্ষেপের প্রমাণ থাকতে হবে। চতুর্থত, তিনি যেন এলাকার সাধারণ মানুষের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন—তাদের সমস্যা শুনে সমাধানের উদ্যোগ নেন। আর পঞ্চমত, তিনি যেন গণতন্ত্রের চর্চায় বিশ্বাসী হন, সমালোচনা সহ্য করতে পারেন এবং তরুণ প্রজন্মকে রাজনীতিতে যুক্ত করতে উৎসাহ দেন।
আজকের রাজনীতি অনেকটাই ব্যবসা আর ক্ষমতার খেলায় পরিণত হয়েছে। কিন্তু এই খেলায় হারছে সাধারণ মানুষ, হারছে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। তাই সময় এসেছে সচেতন হওয়ার। মনে রাখবেন, আপনি যাকে ভোট দেবেন, সে কেবল আপনার এলাকার নয়—পুরো দেশের ভবিষ্যৎ গঠনে ভূমিকা রাখবে। একটি ভুল সিদ্ধান্ত আগামী পাঁচ বছরের জন্য আপনাকে শুধু হতাশাই নয়, বঞ্চনাও উপহার দিতে পারে।
তাই আসন্ন নির্বাচনে ভোট দেওয়ার আগে একবার ভাবুন—
যাকে আমি ভোট দিতে যাচ্ছি, তিনি কি আমার বিশ্বাসের যোগ্য?
তার অতীত কি স্বচ্ছ?
তিনি কি জনগণের সমস্যাকে নিজের সমস্যা মনে করেন?
যদি উত্তর “হ্যাঁ” হয়, তবেই তাকে ভোট দিন।
আর যদি মনে হয় তিনি কেবল ক্ষমতা চায়, দায়িত্ব নয়—তাহলে দৃঢ়ভাবে না বলুন।
জনগণের বিবেকই একটি জাতির আসল শক্তি। সেই বিবেক জাগ্রত থাকলেই রাজনীতি হবে পরিষ্কার, নেতৃত্ব হবে আদর্শিক, আর দেশ এগিয়ে যাবে সঠিক পথে।
তাই আজ থেকেই প্রতিজ্ঞা করি—
“আমি ভোট দেব, কিন্তু জানার পরেই।”
--আল আমিন মিলু
আহ্বায়ক
গনঅধিকার পরিষদ
সরিষাবাড়ি উপজেলা শাখা
জামালপুর