নিজস্ব প্রতিবেদক
অপরাধ কখনোই ন্যায়সঙ্গত হতে পারে না, কিন্তু যখন একটি রাষ্ট্র এমন অবস্থায় পৌঁছে যায় যেখানে অপরাধীরাও “সেইফ এক্সিট” বা নিরাপদ প্রস্থান পেয়ে যায়, তখন প্রশ্ন জাগে—এই দেশে অপরাধ করা কি তবে সাহসিকতার নয়, বরং একটি ‘কৌশলগত যোগ্যতা’?
বাংলাদেশসহ তৃতীয় বিশ্বের বহু দেশে এখন এমন এক বাস্তবতা তৈরি হয়েছে যেখানে অপরাধীরা আইনের ফাঁকফোকর, রাজনৈতিক আশ্রয়, প্রভাবশালী সম্পর্ক বা প্রশাসনিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে পার পেয়ে যাচ্ছে। রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যতটা না ন্যায়বিচারের প্রতীক, তার চেয়ে বেশি হয়ে উঠছে ক্ষমতাসীনদের রক্ষাকবচ। আর এই ব্যবস্থার মধ্যেই অপরাধীরা খুঁজে নেয় তাদের নিরাপদ আশ্রয়।
🔹 অপরাধীদের জন্য ‘সেইফ এক্সিট’ মানে কী?
‘সেইফ এক্সিট’ বলতে বোঝায় এমন একটি রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সুবিধা, যেখানে অপরাধী ব্যক্তি তার অপরাধের বিচার থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে নিতে পারে— হয় বিদেশে পালিয়ে গিয়ে, নয়তো প্রভাবশালীদের ছায়ায় আশ্রয় নিয়ে। আমাদের দেশে যারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার কাছাকাছি, তারা জানে—অপরাধ করলে ধরা পড়লেও শেষ পর্যন্ত কিছু হবে না। কারণ বিচারব্যবস্থা যেমন দুর্বল, তেমনি বিচার প্রাপ্তির পথও রাজনীতির দখলে।
🔹 অপরাধ এখন আর ভয় নয়, বরং পেশা
যে সমাজে অপরাধ করলে শাস্তির ভয় থাকে না, সেখানে অপরাধ নিজেই একধরনের ‘পেশা’ হয়ে ওঠে। কেউ অর্থের জন্য, কেউ প্রভাবের জন্য, কেউ ক্ষমতার অংশীদার হওয়ার জন্য অপরাধ করে—আর পরে সেই অপরাধ ঢেকে ফেলার জন্য আইনের ফাঁক গলিয়ে “সেইফ এক্সিট” নেয়। ফলাফল, সমাজে অপরাধীর সংখ্যা বাড়ে, কিন্তু বিচারপ্রাপ্ত মানুষের সংখ্যা ক্রমে কমে যায়।
🔹 বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে সাহসী অপরাধীর জন্ম
আমরা ভুলে গেছি—অন্যায় যখন শাস্তিহীন থাকে, তখন সেটাই নতুন অন্যায়ের জন্ম দেয়। আজ যারা ক্ষমতায়, তারা যদি একদিন বিচারহীনতার সংস্কৃতি তৈরি করে, কাল সেই একই সংস্কৃতির শিকার হয় তারাই। রাষ্ট্রের ইতিহাসে বারবার আমরা দেখেছি, একদল অপরাধী আরেকদল অপরাধীকে ক্ষমতায় বসায়, এবং সেই চক্রেই চলতে থাকে ন্যায়ের মৃত্যুর পরিক্রমা।
🔹 ন্যায়বিচারহীন রাষ্ট্রে নাগরিকের ভূমিকা কোথায়?
যখন রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলো বিকল হয়ে পড়ে, তখন দায়িত্ব এসে পড়ে সচেতন নাগরিকদের কাঁধে। জনগণকে বুঝতে হবে—অপরাধীকে আশ্রয় দেওয়া মানে নিজের ভবিষ্যৎ ধ্বংস করা। আজ যাকে রক্ষা করছি, কাল সে-ই সমাজে অন্যায়ের নতুন দৃষ্টান্ত তৈরি করবে।
🔹 উপসংহার
অপরাধ কখনোই সাহসিকতার প্রতীক নয়; বরং রাষ্ট্রীয় দুর্বলতার সুযোগ নেওয়ার এক জঘন্য উপায়। কিন্তু যখন রাষ্ট্র অপরাধীদের ‘সেইফ এক্সিট’ দেয়, তখন প্রকৃত সাহসীরা—অর্থাৎ যারা সত্যের পক্ষে দাঁড়ায়—তারা হয় নিপীড়িত, হয় কারাবন্দী।
এই বাস্তবতা বদলাতে হলে দরকার শক্তিশালী বিচারব্যবস্থা, নিরপেক্ষ প্রশাসন এবং জবাবদিহিমূলক রাজনীতি।
কারণ, যে দেশে অপরাধীরাও নিরাপদ প্রস্থান পায়, সেই দেশে সাধারণ মানুষও আর নিরাপদ থাকে না।
-আল আমিন মিলু
আহ্বায়ক
গনঅধিকার পরিষদ
সরিষাবাড়ি উপজেলা শাখা
জামালপুর