নিজস্ব প্রতিবেদক
যখন আমরা দেখি সরকারি দপ্তরে লুকোচুরি, ন্যায্যতা না পাওয়া, আর জনগণের আশা-হতাশার মাঝেই জীবন কেটে যাচ্ছে — তখন মনে হয় এক প্রশ্ন বারবার ফেরে: একবার যদি দেশটাকে আদর্শের রাজনীতিতে ফেরানো যেত! এমন একটি রাজনীতি যেখানে মূলনীতি, ন্যায়, স্বচ্ছতা ও জনকল্যাণই নীতি—এ জীবনের সব স্তরের মানুষই তার সুফল পেত। আজকের এই কলামে আমি সেই স্বপ্নকে বাস্তবের পথে নেয়ার কিছু চিন্তা আর আহ্বান লিখছি।
প্রথমেই পরিষ্কার কথা—আদর্শের রাজনীতি কোন রোমান্টিক অতিরঞ্জন নয়। এটা বাস্তবিক নীতি ও কাঠামোর সমন্বয়; যেখানে দায়িত্বপ্রাপ্তরা নিজের ব্যক্তিগত স্বার্থের আগে দেশের স্বার্থকে রাখে, যেখানে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় জনমতের ভিত্তিতে, এবং যেখানে ক্ষমতা ব্যবহারে সততা ও জবাবদিহিতার সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠিত। এর অর্থ স্কুল-হাসপাতাল-রাস্তাকে উন্নত করা মাত্রই শেষ নয়; এটি মানে প্রশাসন, বিচারব্যবস্থা, শিক্ষাব্যবস্থা ও বাজার—সবখানেই ন্যায় ও সুযোগের সমতা তৈরি করা।
আদর্শের রাজনীতির ব্যক্ত্যাগুলো — জনসাধারনের জীবন বদলে দেয় কেন
১) স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা: যখন সকল সিদ্ধান্ত ও ব্যয় স্বচ্ছ হবে, দুর্নীতির জায়গা কমে যাবে। লোকসানের প্রকল্প বাতিল হবে, জনগণের টাকা সঠিক কাজে লাগবে — জীবনযাত্রার মান বাড়বে।
২) আইনের শাসন: আইনের উপরে কেউ থাকবে না; দুর্নীতিবাজ ও ক্ষমতাধরকেও আইনের মুখোমুখি আনলে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মানুষের ন্যায়িক নিরাপত্তা বাড়ে।
৩) সাধারণ নাগরিকের অংশগ্রহণ: নীতিনির্ধারণে নাগরিক অংশগ্রহণ থাকলে সিদ্ধান্ত বাস্তবসম্মত হবে; স্থানীয় সমস্যা স্থানীয়ভাবে সমাধান হবে।
৪) মানসম্পন্ন শিক্ষা ও স্বাস্থ্য: দীর্ঘমেয়াদী মানবসম্পদ বিনিয়োগ বেকারত্ব কমাবে, পরিবারগুলোর আয় বাড়াবে, রোগব্যাধি কাঁধে চাপ কমাবে।
৫) ভিত্তিবিহীন সুযোগ সৃষ্টি: meritocracy—দক্ষ লোকই উপর উঠবে; ফলে কর্মদক্ষতা বাড়বে, সেবার মান বাড়বে।
বাধা ও কিভাবে ভাঙা যাবে
আদর্শ প্রতিষ্ঠা সহজ নয় — কারণ সুবিধাভোগীরা পরিবর্তন চায় না। তবে কিছু বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করলে অগ্রগতি সম্ভব:
জন নেতৃত্বের অদম্য জল্পনা: রাজনীতিবিদরা যদি স্বীয় আচরণ বদলে দেন—স্বচ্ছ আর কর্মদক্ষ নেতৃত্ব দেখান—অনেক বাধা অতিক্রম করা যায়। এতে মূল্যবোধের নতুন সংস্কৃতি জন্মায়।
আইনি সংস্কার ও স্বাধীন প্রতিষ্ঠান: নির্বাচনী অনিয়ম, দুর্নীতি দমন—এসবের জন্য স্বাধীন কেন্দ্র ও শক্তিশালী অনুসন্ধানী প্রতিষ্ঠান দরকার।
শিক্ষা ও নাগরিক চেতনা: মানুষের মধ্যে নৈতিকতা ও নাগরিক দায়িত্বের শিক্ষায় বিনিয়োগ করতে হবে—স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয়, গণমাধ্যম সবখানেই।
ডিজিটাল ট্রান্সপারেন্সি: সরকারি কার্যক্রম ডিজিটাল করলে তৎক্ষণাৎ নজরদারি সম্ভব—টেন্ডার, বাজেট, প্রকল্প—সব অনলাইনে দেখালে দুর্নীতি কমে।
সামাজিক নিরাপত্তা ও রাষ্ট্রীয় সহায়তা: দুর্বল জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দিলে অনিয়মে জড়ানো কমে, মানুষ জীবিকার জন্য দুর্নীতির পথে না ভানতে বাধ্য হয়।
ছোটো উদ্যোগগুলো বড় রূপ নেবে
আদর্শের রাজনীতি গড়ে ওঠে ছোটো-ছোটো সাফল্য থেকে। একটি পৌরসভায় অপেক্ষাকৃত স্বচ্ছ বাজেট প্রণয়ন, বা একটি স্কুলে শিক্ষক নিয়োগে মেধার ভিত্তিতে নির্বাচন—এসব উদাহরণ ছড়িয়ে পড়লে বৃহৎ মানুষের মনোভাব বদলে যায়। তাই আমাদের প্রত্যেকেই—রাজনীতিক, সাংবাদিক, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, কিংবা গৃহিণী—এ সংস্কৃতির এক কণ ছিলেন; আমরা প্রত্যেকেই চাইতে পারি ও চাপ দিতে পারি পরিবর্তনের জন্য।
শেষ কথাঃ প্রত্যাশা নয়, প্রত্যয়
আদর্শের রাজনীতি কেবল একটি নৈতিক আবেদন নয়; এটি একটি বাস্তব কৌশল—দুর্নীতির ব্যয় বাড়িয়ে, সেবার মান উন্নত করে, সামগ্রিক অর্থনীতিকে গতিশীল করে। যদি আমরা একসাথে পরীক্ষা চালাই, সাহসী সিদ্ধান্ত নেয়া নেতৃত্বকে সমর্থন করি, আর তরুণদেরকে রাজনৈতিক অংশগ্রহণের সুযোগ দিই—তবে এই স্বপ্ন সার্থক হবে।
একবার যদি দেশটা ফেরানো যায় আদর্শের রাজনীতিতে—সেই দিনের বাতাস অন্যরকম হবে। প্রতিটি পরিবার, প্রতিটি মানুষ তার সুফল পাবে: নিরাপদ স্বাস্থ্য, মানসম্মত শিক্ষা, কাজের সুযোগ, ন্যায্য বিচার, আর গৃহীত নীতিতে সম্মান। এই স্বপ্ন কেবল বাঁচিয়ে রাখার নয়—আমাদের এখনই কাজ করে তা তৈরি করার সময় এসেছে। আপনি, আমি, ও আমরা—চারপাশে প্রচার করি ন্যায় ও আদর্শকে। তখনই দেখা যাবে, ছোট্ট পরিবর্তনগুলো মিলেমিশে অমোঘ রূপ নেবে।
আল আমিন মিলু
আহ্বায়ক
গনঅধিকার পরিষদ
সরিষাবাড়ি উপজেলা শাখা জামালপুর