নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র। এই দেশের মাটি, মানুষ, সরকার ও রাষ্ট্রযন্ত্র—সবকিছুই স্বাধীন সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার রাখে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন ঘটনার ধারাবাহিকতায় এক ভয়ংকর প্রশ্ন জনমনে ঘুরপাক খাচ্ছে—তাহলে কি বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর পরিচালনার দায়িত্ব ভারতের হাতে ছিলো? এই প্রশ্নের জন্ম শুধু রাজনৈতিক বিতর্ক নয়, বরং জাতীয় নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের গভীর সংকটের ইঙ্গিত বহন করে।
স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পরও যদি আমাদের প্রতিরক্ষা বাহিনী নিয়ে এমন সন্দেহের জন্ম হয়, তবে সেটা জাতি হিসেবে আমাদের ব্যর্থতার প্রতীক। সেনাবাহিনী হলো একটি রাষ্ট্রের মর্যাদা, নিরাপত্তা ও অস্তিত্বের শেষ ভরসাস্থল। কিন্তু যদি এই বাহিনীর দিকনির্দেশনা বা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিদেশি প্রভাব থাকে, তবে সেটা কেবল রাজনৈতিক লজ্জাই নয়, বরং জাতীয় বিশ্বাসঘাতকতার শামিল।
ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়, স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা নীতি নিয়ে ভারতের একটি অঘোষিত প্রভাব কাজ করেছে। ১৯৭২ সালের মৈত্রী চুক্তি থেকে শুরু করে পরবর্তীতে সামরিক সহযোগিতা চুক্তিগুলোয় ভারতের উপস্থিতি সবসময় স্পষ্ট ছিল। তবে গত এক দশকে এই প্রভাব আরও গভীর হয়েছে বলে অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মন্তব্য করেছেন। সীমান্ত নিরাপত্তা, অস্ত্র ক্রয়, এমনকি প্রশিক্ষণ ক্ষেত্রেও ভারতীয় প্রভাব লক্ষণীয়ভাবে বেড়েছে।
এখন প্রশ্ন হলো—এই প্রভাব কতটা “সহযোগিতা” আর কতটা “নিয়ন্ত্রণ”? যদি বিদেশি রাষ্ট্রের ইচ্ছা অনুযায়ী আমাদের সেনা অপারেশন, নিয়োগ, কিংবা কৌশল নির্ধারিত হয়, তাহলে সেটি আর স্বাধীন রাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা নয়; বরং এক পরাধীন রাষ্ট্রের প্রতিরূপ।
আমরা ভুলে যেতে পারি না—যে রাষ্ট্রের সেনাবাহিনী তার জনগণের আনুগত্য হারায়, সে রাষ্ট্র ধ্বংসের মুখে পড়ে। সেনাবাহিনীকে অবশ্যই দেশের সংবিধান, জনগণ ও সার্বভৌমত্বের প্রতি আনুগত্যশীল হতে হবে, কোনো বিদেশি রাষ্ট্র বা ব্যক্তির প্রতি নয়।
আজ আমাদের সবচেয়ে জরুরি কাজ—সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরীণ নীতি, প্রশিক্ষণ ও পরিচালনায় পূর্ণ স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনা। জাতীয় সংসদে প্রতিরক্ষা বিষয়ে উন্মুক্ত আলোচনা, স্বাধীন কমিশনের তদারকি, এবং রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তে বিদেশি প্রভাবমুক্ত থাকা—এই তিনটি বিষয় নিশ্চিত করতে না পারলে সার্বভৌমত্বের দাবি কেবল মুখের বুলি হয়ে যাবে।
জাতি আজ প্রশ্ন করছে—বাংলাদেশের সেনাবাহিনী কি এখনো বাংলাদেশের জনগণের বাহিনী, নাকি কোনো অঘোষিত চুক্তির ছায়ায় বন্দী?
এই প্রশ্নের উত্তর ইতিহাস একদিন নিশ্চয়ই দেবে, কিন্তু তার আগেই আমাদের জেগে উঠতে হবে। কারণ, স্বাধীনতার পরাধীনতা সবচেয়ে ভয়ংকর দাসত্ব।
-আল আমিন মিলু
আহ্বায়ক
গনঅধিকার পরিষদ
সরিষাবাড়ি উপজেলা শাখা
জামালপুর