নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ইতিহাসে জুলাই আন্দোলন একটি যুগান্তকারী অধ্যায় হিসেবে স্থান পাওয়ার যোগ্য। এটি ছিল জনগণের জাগরণের এক অগ্নিক্ষণ—যেখানে তরুণ, ছাত্র, শ্রমজীবী, পেশাজীবী সবাই একত্রিত হয়েছিল অন্যায়, দুঃশাসন ও একচেটিয়া ক্ষমতার বিরুদ্ধে। কিন্তু দুঃখজনক বাস্তবতা হলো, সেই আন্দোলনের নেতৃত্ব যারা দিয়েছিলেন, তাদের প্রতি পরবর্তী রাজনৈতিক আচরণে দেখা গেছে অবিশ্বাস, উপেক্ষা, এমনকি অপমানের সংস্কৃতি। আর সেই “বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শনের রাজনীতি”ই আজ নতুন বাংলাদেশের স্বপ্নকে ধোঁয়াশায় ঢেকে দিয়েছে।
🔹 আন্দোলনের প্রেক্ষাপট
জুলাই আন্দোলন ছিল এক ধরনের সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্রান্তি। দীর্ঘদিন ধরে দমন-পীড়ন, বিচারহীনতা, দুর্নীতি এবং রাজনৈতিক একচেটিয়াকরণের বিরুদ্ধে এই আন্দোলন জন্ম নিয়েছিল। জনগণ ভেবেছিল—এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেবে এমন এক প্রজন্ম, যারা দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে জাতির ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাববে। যারা নতুন বাংলাদেশ গঠনের নৈতিক ভিত্তি স্থাপন করবে।
কিন্তু আন্দোলন শেষ হতেই দৃশ্যপট বদলে গেল। আন্দোলনের পরিপূর্ণ নেতৃত্ব যারা মাঠে-ময়দানে থেকে জনগণকে একত্র করেছিল, তাদের বাদ দিয়ে সুবিধাবাদী ও সুযোগসন্ধানীরা রাজনৈতিক মঞ্চে উঠে এল। ফলে যে “নতুন বাংলাদেশ” গড়ার স্বপ্ন জনগণ দেখেছিল, তা আজ ধোঁয়াশার ঘেরাটোপে বন্দি।
🔹 নেতৃত্বহীনতার পরিণতি
একটি আন্দোলনের প্রাণশক্তি হলো তার আদর্শবান নেতৃত্ব। নেতৃত্বের প্রতি শ্রদ্ধা ও স্বীকৃতি হারিয়ে গেলে আন্দোলন পথ হারায়। জুলাই আন্দোলনের পর দেখা গেছে—যারা রক্ত, ঘাম, চোখের পানি ঝরিয়ে আন্দোলনকে সফলতার মুখে পৌঁছেছিল, তাদের অনেকে আজ রাজনীতির প্রান্তে ঠেলে দেয়া হয়েছে।
ফলে রাজনৈতিক আদর্শের জায়গা দখল করেছে ব্যক্তিগত স্বার্থ, দলবাজি ও ক্ষমতার লোভ।
যেখানে নেতৃত্বের স্বপ্ন ছিল জাতির পুনর্জাগরণ, সেখানে শুরু হয়েছে ব্যক্তিপূজা ও হিংসার রাজনীতি।
🔹 আদর্শ থেকে সরে যাওয়ার বিপদ
জুলাই আন্দোলনের মূল শক্তি ছিল জনগণের আস্থা ও ন্যায়ের প্রত্যাশা। কিন্তু যখন সেই নেতৃত্বকে অবজ্ঞা করা হলো, তখন জনগণের আস্থাও টলে গেল। মানুষ বুঝতে পারলো—যারা নেতৃত্বের দাবি করছে, তারা হয়তো আন্দোলনের মাঠে ছিল না, কিন্তু এখন ভাগ বসাতে চায়। এর ফলেই “নতুন বাংলাদেশ” ধারণাটি আজ বিভক্ত, অনিশ্চিত, ও অবিশ্বাসে পরিপূর্ণ।
🔹 নতুন বাংলাদেশের ধোঁয়াশা
আজ “নতুন বাংলাদেশ” কথাটি মুখে মুখে শোনা যায়, কিন্তু বাস্তবে এর কোনো স্পষ্ট রূপরেখা নেই। কেউ এটিকে পরিবর্তনের ডাক বলে, কেউ আবার এটিকে পুরনো শক্তির পুনরুত্থান বলে মনে করে।
যদি জুলাই আন্দোলনের প্রকৃত নেতৃত্বকে সম্মান দেয়া হতো, তবে এই দিকভ্রান্তি তৈরি হতো না। কারণ তারাই জানতেন আন্দোলনের দর্শন, লক্ষ্য এবং পথ। তাদের বাদ দিয়ে “নতুন বাংলাদেশ” গড়ার প্রচেষ্টা যেন শিকড়বিহীন গাছের মতো—যার পাতা আছে, কিন্তু ফল নেই।
🔹 ভবিষ্যতের করণীয়
নতুন বাংলাদেশ গঠনের জন্য এখন সবচেয়ে প্রয়োজন —
1. জুলাই আন্দোলনের নেতৃত্ব ও ত্যাগের সঠিক মূল্যায়ন,
2. আদর্শভিত্তিক রাজনীতি পুনর্গঠন,
3. গণমানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনা,
4. সুযোগসন্ধানী রাজনীতি প্রতিরোধ, এবং
5. প্রজন্মভিত্তিক নেতৃত্বে ঐক্য সৃষ্টি।
🔹 উপসংহার
জুলাই আন্দোলনের নেতৃত্বকে যদি সময়মতো স্বীকৃতি ও মর্যাদা দেয়া হতো, তাহলে আজকের রাজনৈতিক ধোঁয়াশা থাকতো না। “নতুন বাংলাদেশ” হতো একটি সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা, কোনো অস্পষ্ট প্রতিশ্রুতি নয়। এখনো সময় আছে—আন্দোলনের সেই আদর্শবান নেতৃত্বকে সম্মান জানিয়ে, সত্যিকারের জনগণের রাজনীতি ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
কারণ, নেতৃত্বকে অবমূল্যায়ন করে কোনো জাতি কখনো নতুন ইতিহাস রচনা করতে পারে না।
-আল আমিন মিলু
আহ্বায়ক
গনঅধিকার পরিষদ
সরিষাবাড়ি উপজেলা শাখা
জামালপুর