নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশের দুর্নীতির কাঠামো বিশ্লেষণ করলে একটি বড় কারণ স্পষ্ট হয়ে ওঠে—বেকারত্ব ও মানুষের নিরাপদ আয়ের অভাব। অর্থনৈতিকভাবে অস্থিতিশীল একটি সমাজে ব্যক্তি তার ন্যূনতম প্রয়োজন মেটাতে নির্ভর করে সুযোগসন্ধানী পথে। আর সেই সুযোগ অনেক সময় বৈধ কর্মসংস্থান নয়, বরং রাজনৈতিক প্রভাব, অনিয়ম কিংবা ঘুষের মাধ্যমে আসে। ফলে দুর্নীতি হয়ে ওঠে কেবল কিছু দুর্নীতিবাজ মানুষের ব্যক্তিগত প্রবণতা নয়, বরং একটি প্রাতিষ্ঠানিক সমস্যা।
বাংলাদেশে প্রতি বছর হাজার হাজার তরুণ শিক্ষাজীবন শেষ করে বের হয়। তাদের অনেকেই উচ্চশিক্ষিত, অনেকেই কারিগরি বা সাধারণ শিক্ষায় দক্ষ। কিন্তু পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান নেই। সরকারি চাকরির সীমিত পদে বিপুল প্রতিযোগিতা, বেসরকারি খাতে অস্থিরতা আর বিদেশে কর্মসংস্থানের জটিলতা মিলিয়ে তরুণ সমাজ ক্রমেই হতাশ হয়ে পড়ে। এই হতাশা থেকেই অনেকেই শর্টকাট পথে জীবিকা খুঁজে নেয়। আর সবচেয়ে সহজ শর্টকাট হয়ে ওঠে রাজনীতি।
রাজনীতিতে প্রবেশের মূল উদ্দেশ্য হয় জীবিকার নিশ্চয়তা। একবার রাজনৈতিক প্রভাব তৈরি হলে সেটিকে ব্যবহার করে প্রশাসন, ঠিকাদারি, টেন্ডারবাজি কিংবা ব্যবসা-বাণিজ্যে সুবিধা নেওয়া যায়। এভাবে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড আখেরে আদর্শের জায়গা থেকে সরে গিয়ে অর্থ উপার্জনের হাতিয়ার হয়ে ওঠে। এর সঙ্গে যুক্ত হয় চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব, ঘুষ, এবং ক্ষমতার অপব্যবহার। ফলে বেকারত্ব ও নিরাপদ আয়ের অভাব দুর্নীতিকে শুধু বাড়ায়ই না, একে সামাজিকভাবে বৈধতার মতো অবস্থানও দেয়।
এ অবস্থার সমাধানে একমাত্র পথ হলো কর্মসংস্থান সৃষ্টি। রাষ্ট্র যদি তরুণদের দক্ষতা উন্নয়ন, উদ্যোক্তা সৃষ্টির সুযোগ, ক্ষুদ্রঋণ ও সহজ শর্তের ব্যবসা সুবিধা নিশ্চিত করে, তবে তাদের আর দুর্নীতির পথে নামতে হবে না। রাজনীতি তখন জীবিকা নয়, প্রকৃত অর্থে জনসেবার ক্ষেত্র হয়ে উঠতে পারে।
সুতরাং বলা যায়, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই কেবল আইন-কানুন দিয়ে সম্ভব নয়। এর মূলে থাকা বেকারত্ব ও অনিরাপদ আয়কে মোকাবিলা করতে হবে। যতদিন পর্যন্ত মানুষ নিরাপদ জীবিকার নিশ্চয়তা না পাবে, ততদিন দুর্নীতি থেকে মুক্ত হওয়া কঠিনই থেকে যাবে।
-আল আমিন মিলু
আহ্বায়ক
গনঅধিকার পরিষদ
সরিষাবাড়ি উপজেলা শাখা
জামালপুর