নিজস্ব প্রতিবেদক
৫ আগস্টের পর দেশে যে পরিবর্তনের আশা ছিল, তা একধরনের সামাজিক চুক্তির মতোই মানুষের মনে জন্ম নিয়েছিল। ভাবা হয়েছিল—লুটপাট, দখলদারিত্ব, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, হাট-ঘাট দখল, মামলাবাজি কিংবা সালিশ বানিজ্যের মতো কলঙ্কজনক অধ্যায়গুলো ইতিহাস হয়ে যাবে। জনগণ বিশ্বাস করেছিল—সংবিধান সংস্কার হবে, বিচার ব্যবস্থা নিরপেক্ষ হবে, নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করবে, রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রতিটি অঙ্গ দুর্নীতি ও দলীয়করণের বাইরে গিয়ে কাজ শুরু করবে।
কিন্তু বাস্তবতা হলো—এখনও একই চক্র সক্রিয়। শুধু মুখোশ পাল্টেছে, চরিত্র নয়। যারা ক্ষমতার ছায়ায় থেকে এই লুটপাট আর দখলদারিত্ব চালিয়ে আসছিল, তারাই আবার ভিন্ন রঙে ফিরে এসেছে। এ কারণেই পরিবর্তনের যে ধারাবাহিকতা গড়ে ওঠার কথা ছিল, তা হয়নি।
প্রশ্ন হলো—কেন হয়নি?
এর মূল উত্তর লুকিয়ে আছে “ক্ষমতার কাঠামোতে”। ক্ষমতা যার হাতে, পরিবর্তনের চাবিকাঠিও তার হাতে। অথচ ইতিহাস বারবার প্রমাণ করেছে—ক্ষমতাধারীরা নিজের সুবিধার বিপরীতে কোনো সংস্কার সহজে মেনে নেয় না। কারণ, সংস্কার মানে তাদের নিয়ন্ত্রণে ফাঁক তৈরি হওয়া, স্বার্থের বলয় দুর্বল হয়ে যাওয়া। তাই সংবিধান সংশোধন, বিচার ব্যবস্থার সংস্কার, কিংবা নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন করার মতো বিষয়গুলো বাস্তবায়িত হয়নি, কেবল স্লোগানে সীমাবদ্ধ রয়ে গেছে।
এখন প্রশ্ন হলো—যদি এই সংস্কার না-ই হয়, তাহলে সামনে কী অপেক্ষা করছে?
উত্তর একটাই—যা আমরা বহুবার দেখেছি।
লুটপাটের বাজার আরও বড় হবে।
দখলদারিত্ব আরও গভীর হবে।
নির্বাচন আবারো প্রশ্নবিদ্ধ হবে।
জনগণ আবারও আস্থা হারাবে।
আর এই আস্থাহীনতা ধীরে ধীরে রাষ্ট্রকে অস্থিরতার দিকে ঠেলে দেবে।
তারপরও কেন তা হতে দেওয়া হচ্ছে?
কারণ এখানে আসল চালিকা শক্তি হলো ক্ষমতা। ক্ষমতার মোহ মানুষকে অন্ধ করে দেয়। দেশের ভবিষ্যৎ, জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা, ন্যায়বিচার কিংবা গণতন্ত্র—সবই তখন গৌণ হয়ে পড়ে।
অতএব, যে সংস্কারের স্বপ্নে মানুষ ৫ আগস্টের পর আশান্বিত হয়েছিল, সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত করতে হলে শুধু নীতির ভাষণ নয়, দরকার রাজনৈতিক সদিচ্ছা। আর সেই সদিচ্ছা কেবল তখনই আসবে যখন ক্ষমতার লোভকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। নচেৎ, ভবিষ্যৎ কেবল পুনরাবৃত্তি আর ব্যর্থতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে।
-আল আমিন মিলু
আহ্বায়ক
গনঅধিকার পরিষদ
সরিষাবাড়ি উপজেলা শাখা
জামালপুর