কামরুল হাসান:
জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জ উপজেলাধীন চিকাজানি মৌজার ০.১০ (দশ) শতাংশ জমির মালিকানা দাবিতে প্রকৃত মালিকগনের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট আদালতে হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে স্থানীয় মামলাবাজ সাজু মিয়া গং। ওই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দেওয়ানগঞ্জ মডেল থানার এএসআই (নি:) ওবায়দুল হক কর্তৃক দাখিলকৃত তদন্ত প্রতিবেদনটি একতরফা ও পক্ষপাতিত্বমূলক বলে দাবি করছে বিবাদী পক্ষ। তাই দাখিলকৃত তদন্ত প্রতিবেদনটি বাতিলপূর্বক পুন:তদন্তের দাবিতে বিবাদী পক্ষের মহি উদ্দিন ১১ সেপ্টেম্বর,২০২৫ তারিখে ডিআইজি, ময়মনসিংহ রেঞ্জ, বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় বরাবর আবেদন করেন।
জানা যায়, জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জ উপজেলাধীন চিকাজানি গ্রামের মরহুম মফিজ উদ্দিন মিয়ার ছেলে আব্দুর রহিম মিয়া গং-এর নিকট হতে একই গ্রামের মরহুম আব্দুছ ছবুর মিয়ার ছেলে মোবরক হোসেন ওরফে কিনু মিয়া বিগত ২৯ অক্টোবর, ১৯৮৪ তারিখে জামালপুর সাব রেজিস্ট্রার অফিসের ১৯২৬৩ নং দলিলমূলে ০.১০ (দশ) শতাংশ জমির মালিনা প্রাপ্ত হন। নি¤œ তফসিলভুক্ত জমিই দাবীকৃত জমি বলে উল্লেখ করেছে ভুক্তভোগী পরিবার। জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জ উপজেলাধীন চিকাজানি মৌজার মধ্যে সিএস খতিয়ান নং ৯০৭, সিএস দাগ নং ১১৩১-এর মোট জমি ০.১০ (দশ) শতাংশের সমোদয় জমিই দাবিকৃত জমি। অপরদিকে, আরওআর খতিয়ান নং ১১১০, আরওআর দাগ নং ১১৩১-এর মোট জমি ০.১০ (দশ) শতাংশের সমোদয় জমিই দাবিকৃত জমি। আবার, বিআরএস খতিয়ান নং ১২৫৮, বিআরএস দাগ নং ২৫৫৬, মোট জমি ০.০৭ (সাত) শতাংশ কাতে ০.০১ (এক) শতাংশ পূর্বাংশে- বিআরএস খতিয়ান নং ১২৫৯, বিআরএস দাগ নং ২৫৫৭, মোট জমি ০.০৬ (ছয়) শতাংশ কাতে ০.০১ (এক) শতাংশ পূর্বাংশে এবং বিআরএস খতিয়ান নং ৭০, বিআরএস দাগ নং ২৫৫৮, মোট জমি ০.০৮ (আট) শতাংশ কাতে ০.০১ (এক) শতাংশ পূর্বাংশেসহ সর্বমোট ০.১০ (দশ) শতাংশ জমি। যার চৌহুদ্দী হলো-বিআরএস ২৫৫৬ নং দাগের উত্তরে বাদী নিজ, দক্ষিনে আ. গফুর, পূর্বে বাদী নিজ ও পশ্চিমে লাল মিয়া। বিআরএস ২৫৫৭ নং দাগের উত্তরে রাস্তা, দক্ষিনে বাদী নিজ, পূর্বে বাদী নিজ ও পশ্চিমে সাদা মিয়া। এছাড়া বিআরএস ২৫৫৮ নং দাগের উত্তরে রাস্তা, দক্ষিনে তারেকুজ্জামান, পূর্বে বাদী নিজ ও পশ্চিমে বাদী নিজ।
উল্লেখ্য, ওই দলিলের তফসিলে দাগ নং ভুল হওয়ার কারনে দাতাগনের পক্ষে তাদের ওয়ারিশ একই গ্রাম চিকাজানি চন্দ্রা পাড়ার আ. ওহমান শেখের ছেলে চান্দু শেখ ছলেনামা প্রদান করে। চান্দু শেখ কর্তৃক প্রদত্ত ছলেনামা মোতাবেক সহকারী জজ আদালত দেওয়ানগঞ্জ, জামালপুর-এর মোকাদ্দমা নং ৩১/২০০৫অন্য প্রকার বাদীপক্ষ অর্থাৎ মোবরক হোসেন ওরফে কিনু মিয়ার ওয়ারিশগনের পক্ষে রায় প্রদান করে। উক্ত রায়ের ভিত্তিতে দলিল সংশোধন করা হয়। ওই দলিলের গ্রহীতা মোবরক হোসেন ওরফে কিনু মিয়ার মৃত্যুর পর বিআরএস রেকর্ডে সামান্য ভুল-ত্রæটি হয়। উহা সংশোধনের নিমিত্তে মোবরক হোসেন ওরফে কিনু মিয়ার ওয়ারিশগনের পক্ষে তার ছেলে মহি উদ্দিন বাদী হয়ে বিজ্হ সহকারী জজ আদালত, জামালপুরে মোকদ্দমা নং ১৩৭/২০১৬ অন্য প্রকার আনায়ন করেন। বিজ্ঞ আদালত বাদী পক্ষের জমি সংক্রান্ত কাগজপত্র যাচাই সাপেক্ষে সঠিক পায়। সে মোতাবেক বাদীর পক্ষে একতরফা রায় প্রদান করে। উক্ত রায়ের বিরুদ্ধে বিবাদী পক্ষ একই আদালতে ছানী মোকাদ্দমা আনায়ন করে। যা বিচারাধীন রয়েছে। কিন্তু সকল বিবাদীগন আদালতের রায়কে উপেক্ষা করে প্রকৃত মালিক মোবরক হোসেন ওরফে কিনু মিয়ার ওয়ারিশগনের বৈধ মালিকানাধীন জমি জবর দখল করার জন্য উঠে-পড়ে লাগছে। এ ধারাবাহিকতায় বিগত ৫ এপ্রিল, ২০২৫ তারিখে জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জ উপজেলাধীন চিকাজানি গ্রামের চন্দ্রাপাড়ার সাজু মিয়া (৪০)-এর নেতৃত্বে একদল দাঙ্গা-হামলাবাজ ও কলহপ্রিয় লোক উপরিউক্ত তফসিলভুক্ত জমিতে জোরামূলে ঘর উত্তোলন শুরু করে। এতে বাধা দিলে বিবাদীগন দেশীয় অস্ত্র উঁচিয়ে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। রক্তপাত ও প্রাণনাশসহ আইন-শৃঙ্খলার অবনতির আশঙ্কায় পরদিন ০৬.০৪.২০২৫ তারিখে দেওয়ানগঞ্জ মডেল থানায় এ বিষয়ে ১৭ জনের নামোল্লেখ করে একটি জিডি করা হয়েছে। জিডি নং ২১১। বিগত ১৮ মে, ২০২৫ তারিখে সকল বিবাদী বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত, জামালপুর-এ নন জিআর মোকাদ্দমা নং ১৪৩/২০২৫ (সূত্র: দেওয়ানগঞ্জ মডেল থানার নন এফআইআর নং ৫০, তারিখ ১৯.০৪.২০২৫। জিডি নং ২১১, তারিখ ০৬.০৪,২০২৫) এর মোট ১৭ জন বিবাদীর (সাজু, বয়স-৪০ হতে সোনা মিয়া, বয়স-৪০) সকলেই বন্ডসই/মুচলেকা দেয়। আদালতে মুচলেকা দেয়ার ক্ষোভ থেকেই বিবাদী পক্ষ ১৪ আগস্ট, ২০২৫ বাদী পক্ষের অর্থাৎ মোবরক হোসেন ওরফে কিনু মিয়ার ওয়ারিশ মহি উদ্দিন গং-এর বিরুদ্ধে আরেকটি হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা দায়ের করে। যার পিং মামলা নং ৫৫০/২০২৫। এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দেওয়ানগঞ্জ মডেল থানার এএসআই (নি:) ওবায়দুল হক বিবাদী পক্ষের কারো সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কথা না বলেই ১৯ আগস্ট, ২০২৫ তারিখে সংশ্লিষ্ট আদালতে একতরফা ও পক্ষপাতিত্বমূলক তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। কিন্তু উক্ত তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর গূঢ় আপত্তি করেন মহি উদ্দিন গং। তাই মহি উদ্দিন ১১ সেপ্টেম্বর,২০২৫ তারিখে ডিআইজি, ময়মনসিংহ রেঞ্জ, বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় বরাবর দেওয়ানগঞ্জ মডল থানার স্মারক নং ২১৫৩, তারিখ ১৯ আগস্ট, ২০২৫ এএসআই (নি:) ওবায়দুল হক কর্তৃক দাখিলকৃত তদন্ত প্রতিবেদন বাতিলপূর্বক পুন:তদন্তের আবেদন করেন। এ বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তা দেওয়ানগঞ্জ মডেল থানার এএসআই (নি:) ওবায়দুল হক জানান, বিবাদী পক্ষের সবাই বাড়ির বাইরে ছিলেন। তবে রফিকুল ইসলাম নামের এক জনের সাথে কথা হয়েছে। এ বিষয়ে রফিকুল ইসলাম বলেন, ওই তদন্ত কর্মকর্তা শুধু অপর বিবাদীদের চিনি কি না এই জিজ্ঞেস করে চলে যান। কিন্তু জমি সংক্রান্ত বিষয়ে কোন কথা জানতে চান নি।
বিচার্য বিষয় হলো-জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জ উপজেলাধীন চিকাজানি গ্রামের মরহুম মফিজ উদ্দিন মিয়ার ছেলে আব্দুর রহিম মিয়া গং-এর নিকট হতে জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জ উপজেলাধীন চিকাজানি মৌজার মধ্যে সিএস খতিয়ান নং ৯০৭, সিএস দাগ নং ১১৩১-এর মোট ০.১০ (দশ) শতাংশ জমি একই গ্রামের মরহুম আব্দুছ ছবুর মিয়ার ছেলে মোবরক হোসেন ওরফে কিনু মিয়া বিগত ২৯ অক্টোবর, ১৯৮৪ তারিখে জামালপুর সাব রেজিস্ট্রার অফিসের ১৯২৬৩ নং দলিলমূলে ০.১০ (দশ) শতাংশ জমির মালিনা প্রাপ্ত হন। এ বিষয়টা খুবই পরিষ্কার। অপরদিকে, জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জ উপজেলাধীন চিকাজানি গ্রামের চন্দ্রাপাড়ার সাজু মিয়া (৪০)-গং কিভাবে বা কেমন করে ওই জমির মালিকানা দাবি করে তা কিন্তু পরিষ্কার নয়। কারন-বিবাদীগন ওই নালিশী জমির পূর্ববর্তী মালিক বা মালিকগণের বংশধর বা বংশের কেউ নন। অথবা, পূর্ববর্তী মালিক বা মালিকগণের বা তাদের ওয়ারিশগনের নিকট হতে কোন দলিলমূলে মালিকানাও প্রাপ্ত হন নি তারা। তাহলে তাদের এ মালিকানা দাবির পেছনে উদ্দেশ্যই বা কি? এ বিষয়ে অধিক ভাবতে হবে। তাই প্রসঙ্গ ক্রমে বলতেই হচ্ছে- কার জমি আর মালিকই বা কে?
কামরুল হাসান